অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বহাল থাকা ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের লিভ টু আপিল ও জামিন শুনানি ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে হাজী সেলিমের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

জামিন শুনানির এক পর্যায়ে হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, হাজী সেলিমের ‘নো ওয়াইফ নো লাইফ’। এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘নো ওয়াইফ নো লাইফ’— এর অর্থ কী?

তখন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, এই মামলা চলাকালে তিনি তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন। সো (তাই) তিনি তো তার স্ত্রীকে পেলেন না। তার স্ত্রী এ মামলায় সহ-আসামি ছিলেন। আর নো লাইফ হচ্ছে, লাইফ অলওয়েজ বিন মিনিং ফুল লাইফ। একটা লোকের হাত থাকবে, পা থাকবে, চোখ থাকবে। পঞ্চ ইন্দ্রিয় কাজ করবে। আমরা সবাই জানি হাজী মোহাম্মদ সেলিম বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। স্ট্রোক করার ফলে তার অনেকগুলো ইন্দ্রিয় কাজ করছে না। যার ইন্দ্রিয় কাজ করে না, তার কোনো লাইফ নেই।

পরে আদালত হাজী সেলিমের জামিন আবেদন রেকর্ডভুক্ত করেন এবং শুনানি ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করেন।

গত ২৪ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টে বহাল থাকা ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিম। আপিলে ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস চেয়েছেন তিনি। আপিল আবেদনে হাজী সেলিমের জামিন চাওয়া হয়।

২২ মে আদালতের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করেন আওয়ামী লীগের এ সংসদ সদস্য। সেদিন জামিন আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসসহ শারীরিক নানা জটিলতা থাকায় সোমবার (২৩ মে) হাজী সেলিমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে, বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ড বহালের রায়ের নথি হাইকোর্ট থেকে গত ২৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে পৌঁছে। নিয়মানুযায়ী ২৫ এপ্রিল থেকে ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হতো। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই (২২ মে) আত্মসমর্পণ করেন হাজী সেলিম।

২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন।

পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের আগের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টেই শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রায় প্রকাশ করা হয়।

এমএইচডি/আরএইচ