শুধুমাত্র বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দণ্ডিত অপরাধীকে জামিন দেওয়ার সুযোগ নেই বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এক্ষেত্রে অপরাধের গভীরতা বিবেচনা করতে হবে।

আদালত বলেছেন, শ্বশুরসহ কয়েকজন আত্মীয়ের নামে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করে আত্মসাতের ঘটনায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন আহমেদকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ ন্যায়সঙ্গত হয়নি। এ জামিনের সিদ্ধান্ত ছিল অবিবেচনাপ্রসূত ও ন্যায়ভ্রষ্ট।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ মো. কুতুব উদ্দিন আহমেদের জামিন বাতিলের রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কৃঞ্চা দেবনাথ।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রায় প্রকাশের বিষয়টি দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান নিশ্চিত করেছেন।

রায়ে আদালত বলেছেন, জামিন দেওয়ার বিষয়টি আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। অপরাধ জামিনযোগ্য হলে বিচারাধীন আসামির জামিন নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ অজামিনযোগ্য হলে অসুস্থ ও জরাগ্রস্ত বন্দি, নারী ও শিশুর জামিন বিবেচনা করার সুযোগ আদালতের রয়েছে। এক্ষেত্রে বিচারাধীন বা দণ্ডিত আসামির জামিন মঞ্জুরের বিষয়টি পুরোপুরি ভিন্ন। একসঙ্গে মেলানোর সুযোগ নেই।

ভুয়া আমমোক্তারনামার মাধ্যমে প্লট আত্মসাতের মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হয় কুতুবের। গত ১৪ জুলাই তাকে ছয় মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। পরে কুতুব উদ্দিন আহমেদকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বাতিল করেন আপিল বিভাগ। এই মামলায় চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর গত ১৬ মার্চ নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে কুতুবের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট।

২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান থানায় কুতুব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কুতুব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও ভুয়া আমমোক্তারনামার মাধ্যমে গুলশানে ১০ কাঠার একটি প্লট তার শ্বশুরসহ কয়েকজনের নামে বরাদ্দ করেছেন।

এদিকে জামিন বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, কোন মামলায় জামিন দেওয়া বা না দেওয়া হাইকোর্টের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। কিন্তু যখন কোনো মামলায় যুক্তির বাইরে গিয়ে হাইকোর্ট জামিনের সিদ্ধান্ত দেয়, তখনই আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করে।

বর্তমান মামলায় আসামির আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত থাকার পরও শুনানি না করে আসামিকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। যা ন্যায়সঙ্গত হয়নি। হাইকোর্টের উচিত ছিল, যেহেতু আসামির আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত সেহেতু দ্রুত নিষ্পত্তি করা। কিন্তু সেটা না করে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জামিন দিয়েছে। এ কারণে আমরা মনে করি হাইকোর্টের জামিনের সিদ্ধান্ত ছিল অবিবেচনাপ্রসূত ও ন্যায়ভ্রষ্ট। সেজন্য ওই জামিন আদেশ বাতিল করা হলো।

এমএইচডি/এমএইচএস