কার্টুনিস্ট কিশোরের মামলার আবেদনের বিষয়ে আদেশ বিকেলে
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর নির্যাতনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজ্ঞাত সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করতে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর আদালতে আবেদন করেন। ওই আবেদনের বিষয়ে আজ (১৪ মার্চ) বিকেলে আদেশ দেবেন আদালত।
কার্টুনিস্ট কিশোরের আইনজীবী জায়েদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা আদেশের জন্য শুনানি করেছি। আজ (রোববার) বিকেলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত এ সংক্রান্ত মামলার আদেশ দেবেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত বুধবার (১০ মার্চ) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর নির্যাতনের ঘটনায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর অজ্ঞাত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। এরপর আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে নথি পর্যালোচনা শেষে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ৫ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর গ্রেফতার হন। কিন্তু তার তিনদিন আগে ২ মে বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে তার বাসা থেকে সাদা পোশাকধারী ১৬/১৭ জন তাকে মুখোশ পরিয়ে হাতকড়া লাগিয়ে নির্জন অচেনা জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর ২ মে থেকে ৩ মে পর্যন্ত তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগে কিশোর বলেন, গত বছরের ২ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাসার কলিংবেলে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুললেই অপরিচিত একজন আমাকে বলে দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে আসেন। সঙ্গে একটি ভালো শার্ট পরেন। আমি তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা আমাকে পরিচয় দেয়নি। তাদের আলাপ-আলোচনায় একজনকে জসিম বলে ডাকতে শুনি। সবাই ঘরে ঢুকেই তল্লাশি শুরু করেন। তারা আমাকে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। বাসা থেকে আমার মোবাইল, সিপিইউ ও যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ছিল তা অবৈধভাবে নিয়ে যায়।
আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামানো হয়, তখন বাসার সামনে ৬/৭টি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। আমার বাসার সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং একটি গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। আমি তখন প্রচণ্ডভাবে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু গাড়িতে তারা অনেক জোরে শব্দ করে গান বাজাচ্ছিল। হয়তো এজন্য আমার চিৎকার বাইরে শোনা যাচ্ছিল না।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে বুঝতে পারলাম আমাকে পুরনো একটি স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর প্রোজেক্টরের মাধ্যমে একটির পর একটি কার্টুন দেখানো হচ্ছিল। সেগুলোর মর্মার্থ জানতে চাওয়া হচ্ছে। করোনা নিয়ে আমার কিছু কার্টুন দেখিয়ে, সেগুলো আঁকার কারণ জানতে চাওয়া হয়। এক পর্যায়ে আমার কানে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করা হয়। এরপর আমি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাতের লাঠি দিয়ে আমার হাঁটুতে আঘাত করা হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি আমি। এভাবে ২ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
কিশোর আরও উল্লেখ করেন, পরবর্তীতে আমি নিজেকে র্যাব কার্যালয়ে দেখতে পাই। ওইখানে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। মুশতাক বলেছিলেন, তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। এরপর গত বছরের ৬ মে আমাদের রমনা থানায় হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে পারি না।
টিএইচ/এইচকে