পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক পরিচালক (বহিষ্কার হওয়া) আরেফিন শামসুল আলামিন সাড়ে আট কোটি টাকা হাইকোর্টে জমা দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে আত্মসাতের আরও ৫৭ কোটি ৩৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৮ টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। 

একইসঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে এবং বিদেশে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে বাধা দূর করতে আদালতের কাছে আবেদন করেন তিনি। গত ১৫ মার্চ আরেফিন শামসুল আলামিনের এ আবেদনের ওপর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য ৩০ মার্চ দিন ধার্য করেন।

আদালতে ওইদিন আরেফিন শামসুল আলামিনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জরুল হক ও সৈয়দা নাসরিন। পরে আইনজীবী শাহ মঞ্জরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে আদালতে সাড়ে আট কোটি টাকা জমা দিয়েছি। আদালতের কাছে আরেফিন শামসুল আলামিনের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে এবং বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে আবেদন করেছি। আগামী ৩০ মার্চ আদালত এ বিষয়ে আদেশ দেবেন।

নথি থেকে  জানা যায়, চেকের মাধ্যমে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা এবং পে-অর্ডারের মাধ্যমে তিন কোটি টাকা আদালতে জমা দিয়েছেন আরেফিন শামসুল আলামিন। পরে চেক ও পে-অর্ডারের টাকা পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খান আদালত থেকে গ্রহণ করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পিপলস লিজিংয়ের আরও তিন ঋণখেলাপি ২৩ লাখ টাকা আদালতের মাধ্যমে সাময়িক অবসায়ক মো. আসাদুজ্জামান খানের কাছে জমা দিয়েছেন।

আদালতে দাখিল করা আবেদনে বলা হয়, আবেদনকারী আরেফিন শামসুল আলামিনের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি টাকা দিতে পারেননি। তবে, আবেদনকারীর টাকা পরিশোধের সর্বোচ্চ সদিচ্ছা আছে। তিনি মোট ৬৫ কোটি ৮৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৫ টাকা পরিশোধ করতে চান। এজন্য তিনি সাড়ে আট কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন এবং বাকি ৫৭ কোটি ৩৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৮ টাকা মাসিক ৭৫ লাখ টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে চান।

আরেফিন শামসুল আলামিনের  দাবি, পিপলস লিজিং তার কাছে পাবে ৬৫ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, আরেফিন শামসুল আলামিনের কাছে পাওনা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

অনিয়মের দায়ে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে আরেফিন শামসুল আলামিনসহ পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) বহিষ্কার হওয়া নয় পরিচালকের নামে থাকা সব ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার জব্দের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এছাড়া, আদালতের নির্দেশে তাদের বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

গত ২১ জানুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে পাঁচ লাখ টাকা এবং তার বেশি অর্থ ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া এমন ২৮০ ব্যক্তিকে তলব করেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশে গত ২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৫৮ ঋণখেলাপি হাইকোর্টে হাজির হন। এর মধ্যে আরেফিন শামসুল আলামিনও ছিলেন। 

হাইকোর্ট ওই সময় তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আগে টাকা দেবেন, তারপর আলোচনা। না দিলে কারাগারে যেতে হবে’। আদালতের তলব আদেশের পরও হাজির না হওয়ায় পিপলস লিজিংয়ের ১২২ ঋণখেলাপির বিদেশ গমনে গত ৯ মার্চ নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।

এমএইচডি/এসকেডি/এমএআর