অভিনেত্রী আশার মৃত্যু : তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে পরিবারে হতাশা
অভিনেত্রী আয়েশা আক্তার আশা
অভিনেত্রী আয়েশা আক্তার আশার মৃত্যুর ঘটনায় মূল রহস্য এখনও উদ্ঘাটন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা। তিন মাসেও ঘটনার মূল রহস্য বের করতে না পারায় আশার পরিবার হতাশ।
আশার বাবা আবু কালাম মনে করেন, দুর্ঘটনা নয়, আশার মৃত্যুর পেছনে অন্য গন্ধ থাকতে পারে। টাকা-পয়সা নেই বলে বিচার পাবেন না। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলার তদন্তে অগ্রগতি বেশ ভালো। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
বিজ্ঞাপন
গত ৪ জানুয়ারি রাত ২টার দিকে দারুস সালাম টেকনিক্যাল মোড়ে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আয়েশা। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় ৫ জানুয়ারি আশার বাবা আবু কালাম বাদী হয়ে মোটরসাইকেলের চালক শামীম আহমেদকে আসামি করে দারুস সালাম থানায় মামলা করেন।
আশার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার মেয়েটা ছিল খুবই লক্ষ্মী। হাজারের মধ্যে একটা। সে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করত। তার চাকরির টাকায় আমাদের সংসার চলত। আল্লাহ তো সুখ আমার কপালে রাখল না। আমরা বিচার চাই’।
বিজ্ঞাপন
মামলার বাদী ও আশার বাবা আবু কালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার চার মেয়ের মধ্যে আশা বড়। তাকেতো আল্লাহ নিয়ে গেছে, এখনতো আমাদের বিপদে ফেলে দিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে আশা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়ত। ইডেন কলেজ থেকে ইংলিশে শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিল। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে গেল।’
মামলার তদন্তের বিষয়ে আশার বাবা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ধাক্কা দেওয়ার গাড়ি এখনও ধরতে পারেনি, পোস্টমর্টেম রিপোর্টও হাতে পায়নি।’
দারুস সালাম থানার পুলিশের উপপরিদর্শক তদন্ত কর্মকর্তা সোহান আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মামলার তদন্তে অগ্রগতি বেশ ভালো। আমরা ইতোমধ্যে সব ডকুমেন্ট গুছিয়ে নিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে খুব শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করব।’
তদন্তে কী পাওয়া গেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি ধাক্কা দেওয়া গাড়িটি খুঁজে বের করতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। এখনো চেষ্টা করছি। যেহেতু মামলার তদন্ত এখনও চলছে তাই বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।’
মামলায় এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি শামীম আহমেদের সঙ্গে আশার পরিচয় ছিল। প্রায়ই শামীম আশাদের বাসায় যাতায়াত করতেন। আশার পরিবারও তাকে বিশ্বাস ও স্নেহ করতেন। মাঝেমধ্যে এবং অভিনয়ের কাজে আসা-যাওয়ায় সহযোগিতা করতেন শামীম। ৪ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে বনানী অফিস থেকে বের হওয়ার সময় আশা তার বাবাকে ফোন করে বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় আসছি।’ তারপর আবার ফোন করে তিনি বলেন, ‘বাড়ির কাজের ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা হয়েছে। কাজ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমি শামীম ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসব।’ পরে রাত পৌনে ২টার দিকে শামীম ফোন করে জানান, ‘আশা আর নেই। টেকনিক্যাল মোড়ে একটি অজ্ঞাত ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করেছে।’
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, শামীম বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে দুই ট্রাকের মাঝখান দিয়ে দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় সামনের ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে আশা মোটরসাইকেলের পেছন থেকে ছিটকে পড়ে যান। এরপর পেছন থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি অজ্ঞাত ট্রাক তাকে চাপা দিলে মাথায় জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই আশা মারা যান।
গত ১০ মার্চ মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার পুলিশের উপপরিদর্শক সোহান আহমেদ প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ উর রহমান আগামী ১২ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দিন ধার্য করেন।
আশা, ছবি : ফেসবুক থেকে নেওয়া
সেদিন যা ঘটেছিল
৪ জানুয়ারি মধ্যরাতে দুর্ঘটনার সময় পেছনে থাকা একটি গাড়ির ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পিকআপের পেছনে মোড় ঘুরতে দাঁড়িয়েছিল আশাকে বহন করা মোটরসাইকেলটি। হঠাৎ করে দ্রুতগতির একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে চালক ডান দিকে এবং আশা বাম পাশে ট্রাকের সামনে গিয়ে পড়েন। ট্রাকে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এ টেলিভিশন অভিনেত্রী। থেঁতলে যায় মুখ। সঙ্গে সঙ্গেই মোটরসাইকেল চালক দৌড়ে গিয়ে দেখেন সড়কে পড়ে আছে আশার নিষ্প্রাণ দেহ।
ঘটনার পরদিন ৫ জানুয়ারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট হতে চেয়েছিলেন আশা
ঢাকা পোস্টের কাছে মেয়ের স্মৃতিচারণ করে বাবা আবুল কালাম বলেন, ‘আশা বিইউবিটিতে আইন বিষয়ে অনার্স পড়ছিল। তারা ইচ্ছা ছিল অনার্স শেষ করে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে। বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হবে। আশা প্রায়ই বলত, ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে বেতনের টাকা জমিয়ে আমাকে দেবে। ওর আর আমার টাকা একসাথে করে ছয় তলা বাড়ি নির্মাণ করে সবাই একসঙ্গে থাকব।’
সম্প্রতি আশা অভিনয় করেছেন রোমান রুনির ‘দ্য রিভেঞ্জ’ ও ‘এক ফালি রোদ’, জয় সরকারের ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’, কামরুজ্জামান পুতুলের টেলিছবি ‘স্বপ্নে বিভোর বাবা’ এবং আরও কিছু নাটকে।
টিএইচ/এইচকে