মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের মো. রুবেল (২২) হত্যা মামলায় পুলিশের তদন্ত সঠিকভাবে হয়নি বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। মামলাটি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মঙ্গলবার বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়। তবে হাইকোর্ট এই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এজন্য অধিকতর তদন্ত করে আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। আদালত তখন পিবিআইর তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে কিছু প্রশ্ন করে জবাব জানতে চান।

মামলার আগের তদন্তকারী কর্মকর্তা আসলে কোথায় ছিলেন, একই সময়ে তিনি কি কোর্টে ছিলেন, নাকি থানায়, নাকি ঘটনাস্থলে? এ প্রশ্নের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে ২৫ জুলাই সুনির্দিষ্ট করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে সকালে পিবিআইর ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খোদা তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।

মামলার বিস্তারিত তুলে প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের এসআই মো. মাসুদুর রহমানের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মাসুদুর রহমান ২০০২ সালের ৩১ জানুয়ারি কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর এসআই (নিরস্ত্র) পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে এন্টি টেরোরিজম ইউনিটে যোগদান করেন। এরপর সেখান থেকে বদলি হয়ে ২০২২ সালের ৯ আগস্ট মানিকগঞ্জ সদর থানায় যোগ দেন। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরের হত্যা মামলাটি ছিল তার প্রথম তদন্ত।

মামলাটি তদন্তে পুলিশের কর্মকর্তা আইনের প্রাসঙ্গিক বিধানগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করেননি এবং তদন্ত কার্যক্রম সঠিকভাবে কেস ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেননি মর্মে পিবিআই কর্তৃক অধিকতর তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। মামলাটি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত-তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক আসামিকে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য উপস্থাপনের সময় এবং ঘটনাস্থলে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ডের সময় একই দেখানো হয়েছে যা বাস্তবসম্মত নয়।

এরপর হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলে বলেন, একই সময়ে এক ব্যক্তি কীভাবে তিন জায়গায় (আদালত, থানা, ঘটনাস্থল) থাকতে পারে। এটি সুস্পষ্ট করে অধিকতর তদন্ত করে জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ৩ এপ্রিল এক আদেশে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করতে নির্দেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে এই মামলায় নতুন করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই নির্দেশনা মোতাবেক পিবিআই তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে।

এমএইচডি/এমজে