পি কে হালদার/ ফাইল ছবি

সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের করা প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৫ জনের বিদেশ গমনে তথা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই ২৫ জনকে প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জিজ্ঞেস করতে পারবে বলেও আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এর আগে, সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া পি কে হালদারের করা প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা।

এ ২৫ জন হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর এস কে সুর এবং প্রতি সপ্তাহে পি কে হালদারের সঙ্গে যোগাযোগকারী হারুনুর রশিদ (ফাস ফাইন্যান্স), উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সামি হুদা, অমিতাভ অধিকারী, অবন্তিকা বড়াল, শামীমা (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), রুনাই (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), আই খান (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), সুকুমার মৃধা (ইনকাম ট্যাক্স আইনজীবী), অনিন্দিতা মৃধা, তপন দে, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, অভিজিৎ চৌধুরী, রাজিব সোম, ইরফান উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (সাবেক এমডি ব্যাংক এশিয়া), অঙ্গন মোহন রায়, নঙ্গ চৌ মং, নিজামুল আহসান, মানিক লাল সমাদ্দার ও সোহেল সামস। এছাড়া পি কে হালদারকে বিভিন্নভাবে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারী মাহবুব মুসা, এ কিউ সিদ্দিকী, মোয়াজ্জেম হোসেন ও লিলাবতী হালদারেরও বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ লিলাবতী হালদার হলেন প্রশান্ত কুমার হালদারের মা।

এর আগে ৩ জানুয়ারি পি কে হালদারের প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়েসহ ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা রুল শুনানিতে পক্ষভুক্ত হন।

ওইদিন পি কে হালদারের প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়েসহ ভুক্তভোগীরা আত্মসাৎকরা অর্থ ফিরিয়ে দিতে আদালতের কাছে আকুতি জানান।

তারা উচ্চ আদালতকে বলছেন, আর্থিক ও মানসিক কষ্টে আমরা মারা যাচ্ছি আমাদের বাঁচান।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদে বলা হয়, পি কে হালদার জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হতে বসেছে এবং গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এসবের মধ্যেই পিকে হালদার গোপনে দেশ ছাড়েন। একপর্যায়ে তার বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও তার গ্রেপ্তারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান উচ্চ আদালত।

এদিকে পি কে হালদারের বিষয়ে স্বপ্রণোদিত রুল জারি হয়েছে জেনে হাইকোর্টের কাছে নিজেদের সীমাহীন কষ্টের কথা বলতে দুদক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ জানুয়ারি দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান হাইকোর্টকে বলেন, পিপলস লিজিংয়ের কয়েকজন আমানতকারী কিছু বলতে চান। একপর্যায়ে অনুমতি নিয়ে  হাইকোর্টে নিজেদের দুর্দশার কথা বলেন চার আমানতকারী।

সামিয়া বিনতে মাহবুব নামের এক আমানতকারী অশ্রুসিক্ত নয়নে হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, আজ আমি একজন ক্যানসারের রোগী। আমার এখন আর চাকরি নেই। করোনা আসার পর থেকে আমার স্বামীরও চাকরি নেই। আমি আর আমার স্বামী মিলে আমাদের জীবনের কষ্টার্জিত টাকা পিপলস লিজিংয়ে আমানত হিসেবে রেখেছিলাম। এখন আমারা আমাদের টাকা পাচ্ছি না! এতটা অসহায় হয়ে গেছি যে, এবার বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারিনি। গত এক বছর বাচ্চাদের একটু মাছ মাংস খাওয়াতে পারিনি। আমরা আর্থিক-মানসিক কষ্টে মারা যাচ্ছি। আমারা এখন কার কাছে যাব? মাই লর্ড, আপনাদের কাছে আকুল আবেদন আমাদের বাঁচান।

একপর্যায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে ড. নাশিদ কামাল হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, আমার বাবা এবং আমিসহ পরিবারের পাঁচ জন পিপলস লিজিংয়ে টাকা আমানত রেখেছি। আমারা সরল বিশ্বাসে আমাদের টাকাটা রেখেছিলাম। আমারা গণমাধ্যমে জেনেছি, পি কে হালদার এখান থেকে টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং। তাই এখানকার আমানতকারী হিসেবে আমি আমারা আমাদের টাকাটা ফেরত চাই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. শওকতউর রহমান হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, দেশটা কি স্বাধীন করেছিলাম এভাবে নিজে প্রতারিত হওয়ার জন্য? আমি আমার আমানতের টাকাটা ফেরত চাই।

বিনিয়োগকারীদের এসব কথা শুনে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের শুনানিতে তাদের পক্ষভুক্ত করে নেন। একইসঙ্গে এফিডেভিট আকারে বিনিয়োগকারীদের এই বক্তব্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।

এমএইচডি/এফআর