প্রশান্ত কুমার হালদার/ ফাইল ছবি

পিকে হালদারের (প্রশান্ত কুমার হালদার) প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়েসহ ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা মঙ্গলবার (০৫ জানুয়ারি) এফিডেভিট আকারে তাদের আবেদন হাইকোর্টে দাখিল করবেন।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আবেদনগুলোর ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৫ জন বিনিয়োগকারীকে আদালত পক্ষভূক্ত করেছেন। তারা আজ এফিডেভিট আকারে তাদের কথা ও আবেদন হাইকোর্টে দাখিল করবেন।

গত ৩ জানুয়ারি পিকে হালদারের প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়েসহ ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা আত্মসাৎ করা অর্থ ফিরিয়ে দিতে আদালতের কাছে আবেদন জানান।

তারা উচ্চ আদালতকে বলেছেন, ‘আর্থিক ও মানসিক কষ্টে আমরা মারা যাচ্ছি, আমাদের বাঁচান।’

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, পিকে হালদার জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হতে বসেছে এবং গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এসবের মধ্যেই পিকে হালদার গোপনে দেশ ছাড়েন। একপর্যায়ে তার বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও তার গ্রেফতারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান উচ্চ আদালত। 

এদিকে পিকে হালদারের বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি হয়েছে জেনে হাইকোর্টের কাছে নিজেদের সীমাহীন কষ্টের কথা বলতে দুদক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩ জানুয়ারি দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান হাইকোর্টকে বলেন, পিপলস লিজিংয়ের কয়েকজন আমানতকারী কিছু বলতে চান। একপর্যায়ে অনুমতি নিয়ে হাইকোর্টে নিজেদের দুর্দশার কথা বলেন চার আমানতকারীরা।

সামিয়া বিনতে মাহবুব নামের এক আমানতকারী অশ্রুসিক্ত নয়নে হাইকোর্টকে বলেন, ‘মাই লর্ড, আজ আমি একজন ক্যানসারের রোগী। আমার এখন আর চাকরি নেই। করোনা আসার পর থেকে আমার স্বামীরও চাকরি নেই। আমি আর আমার স্বামী মিলে আমাদের জীবনের কষ্টার্জিত টাকা পিপলস লিজিংয়ে আমানত রেখেছিলাম। এখন আমরা আমাদের টাকা পাচ্ছি না! এতটা অসহায় হয়ে গেছি যে, এবার বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারিনি। গত ১ বছর বাচ্চাদের একটু মাছ মাংস খাওয়াতে পারিনি। আমরা আর্থিক-মানসিক কষ্টে মারা যাচ্ছি। আমরা এখন কার কাছে যাব? মাই লর্ড, আপনাদের কাছে আকুল আবেদন আমাদের বাঁচান।’

সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তাফা কামালের মেয়ে ড. নাশিদ কামাল হাইকোর্টকে বলেন, ‘মাই লর্ড, আমার বাবা এবং আমিসহ পরিবারের ৫ জন পিপলস লিজিংয়ে টাকা আমানত রেখেছি। আমরা সরল বিশ্বাসে আমাদের টাকাটা রেখেছিলাম। গণমাধ্যমে জেনেছি পিকে হালদার এখান থেকে টাকা নিয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং। তাই এখানকার আমানতকারী হিসেবে আমি আমাদের টাকা ফেরত চাই।’
 
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. শওকত-উর রহমান হাইকোর্টকে বলেন, ‘মাই লর্ড, দেশটা কি স্বাধীন করেছিলাম এভাবে নিজে প্রতারিত হওয়ার জন্য? আমি আমার আমানতের টাকাটা ফেরত চাই।’

বিনিয়োগকারীদের এসব কথা শুনে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের শুনানিতে তাদের পক্ষভুক্ত করে নেন। একইসঙ্গে এফিডেভিট আকারে বিনিয়োগকারীদের এই বক্তব্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।

এমএইচডি/জেডএস