‘বিচার নিয়ে কোনো আশা নেই, নিরাশাও নেই’

‘ভাই হারিয়েছি ১৭ বছর হলো। এখনো বিচার পাইনি। বিচার নিয়ে এখন আর কোনো আশা নেই, নিরাশাও নেই। যা হওয়ার তাই হবে। ভাইকে  তো আর ফিরে পাব না’— এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন লেখক, ভাষাবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের ছোট ভাই মঞ্জুর কবির।

২০০৪ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর ড. হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসা নেন। একই বছরের ১২ আগস্ট তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হয়। পরে তা হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও একটি মামলা হয়। মামলা দায়েরের পর কেটে গেছে প্রায় ১৭ বছর। কিন্তু এখনো মামলা দুটির রায় হয়নি।

ড. হুমায়ুন আজাদের ছোট ভাই মঞ্জুর কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হামলার পর আমার ভাই মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দায়ী করেছিলেন। কিন্তু তাকে তো মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়নি, আটকও করা হয়নি। কী আশা করতে পারি আমরা?’

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর বিপুল চন্দ্র দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় মোট ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এখন মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে। এ ধাপ শেষ হলে রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হবে। রায়ে আমরা সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করছি। একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।’

বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। এ মামলায় অনেক আসামি হাইকোর্টে গেছেন। এছাড়া অনেক সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে সময় লেগেছে। তবে হত্যা মামলাটির রায় খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে আমরা আশা করছি।’

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলা একাডেমির উল্টোদিকের ফুটপাতে সন্ত্রাসী হামলায় মারাত্মক আহত হন লেখক হুমায়ুন আজাদ। হামলার পর তিনি ২২ দিন সিএমএইচে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসা নেন। ওই বছরের ১২ আগস্ট তিনি জার্মানির মিউনিখে মারা যান।

ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি ছোট ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পরে তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। এছাড়া একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও একটি মামলা হয়। ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর হত্যা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আবুল আব্বাস ভূইয়া ও গোলাম মোস্তফা নামের ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিট থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাউন, আনোয়ার আলম, হাফিজ মাহমুদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। আসামিদের মধ্যে সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু পলাতক এবং হাফিজ মাহমুদ মারা গেছেন।

২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর এ মামলার বাদী মঞ্জুর কবির মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন। ২০ অক্টোবর বিচারক আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ওই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

টিএইচ/আরএইচ/এমএআর/