রাজধানীর পল্লবীর বেনারশী কারিগর নির্দোষ মো. আরমানের কারাভোগের ঘটনায় পুলিশের সাত কর্মকর্তা জড়িত বলে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

তারা হলেন- পল্লবী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাদন ফকির, পল্লবী থানার সাবেক এএসআই খান ইমদাদুল হক, পল্লবী থানার সাবেক এসআই মো. রাসেল, পল্লবী থানার সাবেক এএসআই হযরত আলী, পল্লবী থানার সাবেক এসআই মনিয়ারা আক্তার, পুলিশ পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম ও পুলিশ পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম খান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সাত পুলিশ কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা করেছেন।

সোমবার (১৪ জুন) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে পিবিআইয়ের এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুন) প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে। রিটকারী আইনজীবী হলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। 

এর আগে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ভুল আসামি হয়ে প্রায় ৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা রাজধানীর পল্লবীর বেনারশী কারিগর মো. আরমানকে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া মো. আরমানকে আসামি করার ঘটনায় কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে পিবিআইকে তদন্ত করতে বলা হয়।

এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

২০২০ সালের ২৩ এপ্রিল ভুল আসামি হয়ে প্রায় ৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা রাজধানীর পল্লবীর বেনারশী কারিগর মো. আরমানকে কেন মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে নির্দোষ মো. আরমানকে কারাগারে রাখায় কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়।

ওই বছরের ২১ এপ্রিল ভুল আসামি হয়ে প্রায় ৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা রাজধানীর পল্লবীর বেনারশী কারিগর মো. আরমানকে আদালতের হাজির করার নির্দেশনা ও মুক্তি চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ল’অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব রিট আবেদনটি দায়ের করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পল্লবী থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

এর আগে ১৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরাধী না হয়েও পাটকল শ্রমিক জাহালমকে জালিয়াতির ৩৩ মামলার আসামি হয়ে ৩ বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল। অনেক ঘাটের জল পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা এখন মানুষের মুখে মুখে। এর রেশ না কাটতেই আরেক জাহালম-কাণ্ড বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে। জানা গেছে, পল্লবীর বেনারশী কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গত ৩ বছর ধরে কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদককারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারী এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু তার পরিচয়ে, তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান। শুধু পিতার নামে মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে শাহাবুদ্দিন নামে আদালতে সোপর্দ করেছে বলে জোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। 

অন্যদিকে প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন কারাগারের বাইরে দিব্যি মাদককারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় প্রশ্ন জেগেছে, এটি কি পুলিশের ভুল, নাকি সচেতন অপরাধ? উৎকোচের বিনিময়েই কি প্রকৃত মাদককারবারিকে রক্ষার অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে? যদি তা-ই হয়, তবে এ ঘটনায় কে কে দায়ী? তাদের আইনের মুখোমুখি করা সম্ভব কি? একদিকে যখন এসব প্রশ্ন উঠছে, অন্যদিকে তখন নির্দোষ কারাবন্দি আরমানের দরিদ্র মা, স্ত্রী আর সন্তানের যাপিত জীবন হয়ে পড়েছে মানবেতর। পুলিশের ভুলে অথবা গোপন কারসাজিতে মৃত ইয়াছিন ওরফে মহিউদ্দিনের ছেলে শাহাবুদ্দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মো. আরমান (৩৬)। শুধু পিতার নামে (মৃত ইয়াছিন) মিল থাকায় শাহাবুদ্দিনের বদলে পল্লবীর ১৩ হাটস, ব্লক-এ, সেকশন-১০ তেজগাঁও নন লোকাল রিলিফ ক্যাম্পের বাসিন্দা মৃগীরোগী আরমানকে বিনা অপরাধে সাজা ভোগ করতে হচ্ছে।

এমএইচডি/জেডএস