জুলাই আন্দোলনে বিজিবি কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর রাফাত বিন আলমের নেতৃত্বে রামপুরায় হত্যাযজ্ঞ চলেছে বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, বিজিবির অসংখ্য সৈনিক সারা বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু এভাবে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেনি। বিশেষত এই দুজন আসামি অতিউৎসাহী হয়ে কমান্ডিং পজিশনে থেকে দু’দিন তাদের নেতৃত্বে রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চলেছে। সব সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। আগামী ২০ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। 

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চারজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর।

তাজুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের ১৮ ও ১৯ জুলাই রামপুরায় ছাত্র-জনতার ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এ মামলায় রেদোয়ানুল-রাফাত ছাড়াও পুলিশের দুই কর্মকর্তা ছিলেন। রামপুরার এই নিষ্ঠুরতা সাংবাদিকদের কল্যাণে গোটা জাতি ও দুনিয়া দেখেছে। অটোমেটিক রাইফেল ও সাব-মেশিনগান দিয়ে নিরস্ত্র-নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপরে টার্গেট করে করে এই দুদিনে ২৮ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। তবে আমরা একটি বার্তা দিতে চাই যে, রাষ্ট্রের সর্বশক্তি নিয়োগ করে বাংলাদেশে যারা গণহত্যা চালিয়েছিল, প্রত্যেকেই অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছিলেন। 

তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার হাতে কোনো ধরনের অস্ত্র ছিল না। তারা কোনোরকম হুমকি তৈরি করেননি। কিন্তু যে বাহিনীর আসামি যারা, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা করার জন্য। কিন্তু সে শক্তি জাতির সবচেয়ে মেধাবী সন্তানদের ওপর প্রয়োগ করেছিলেন তারা। এই দায় আসামিদের ব্যক্তিগত দায়। বাহিনী হিসেবে বিজিবিকে আমরা আসামির শ্রেণিভুক্ত করিনি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ বলেন, রেদোয়ানুল ও রাফাত দুজনই আর্মড ফোর্সেস’র সদস্য। তারা পুরোপুরি নির্দোষ। তাদের গুলিতে আসলে কোনো মানুষ মারা যাননি। যে ২৮ জনের কথা বলা হচ্ছে এটা অতিরিক্ত মাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়া হাইপড। ২৮ জন মানুষের প্রাণ গিয়েছে, এটা হতে পারে। কিন্তু এখানে আমার ক্লায়েন্টের সঙ্গে আরও অন্যান্য বাহিনী বা পুলিশের লোক ছিলেন। সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন। অন্যান্যরা এ ঘটনার পর পালিয়ে গিয়েছেন। এই দুজন চাইলেই পালিয়ে যেতে পারতেন। তাদের মাধ্যমে যেহেতু কোনো সংঘাত হয়নি, তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।

এ মামলায় পলাতকরা হলেন– ডিএমপির খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম ও রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান।

এদিন বিচারিক কার্যক্রম শুরুতেই আসামিদের চাওয়া অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। এরপর ছয়টি অভিযোগ পড়ে শোনান বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।

অভিযোগ পড়া শেষে কাঠগড়ায় থাকা দুই আসামিকে গিল্টি প্লিড করবেন কি না জিজ্ঞেস করা হয়। এ সময় দাঁড়িয়ে রেদোয়ানুল বলেন, আমি নির্দোষ। মহামান্য আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করি। একই সুরে কথা বলেন অপর আসামি রাফাত বিন আলমও। পরে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের বসার অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল। 

এ সময় সূচনা বক্তব্যসহ সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণের আবেদন জানান প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমান। শুরুতে ১৯ জানুয়ারি ঠিক করলেও আসামিপক্ষে আরও সময় বাড়ানোর প্রার্থনা করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ। পরে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২০ জানুয়ারি ধার্য করেন আদালত। 

এমআরআর/বিআরইউ