লকডাউন : গ্রেফতারদের ছাড়াতে অতিরিক্ত খরচ-ভোগান্তি
গ্রেফতারদের ছাড়িয়ে নিতে অপেক্ষারত স্বজনরা
করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) অমান্য করায় রাজধানীতে অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ছাড়িয়ে নিতে রোববার (৪ জুলাই) সকাল থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রাঙ্গণে ভিড় করছেন স্বজনরা।
স্বজনরা বলছেন, তাদের নিকটজনদের ছাড়িয়ে নিতে জরিমানার চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে। আসামিদের ছাড়াতে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। তাছাড়া ভোগান্তিও রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিএমপি অ্যাক্ট অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনশ টাকা জরিমানা করেন আদালত।
স্বজনকে ছাড়িয়ে নিতে খিলগাঁও থেকে আদালতে এসেছেন রিকশাচালক আব্দুল জব্বর মুন্সী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুর ১২টার দিকে আদালতে এসেছি। উকিল আমাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে গেছে। তিনি আমাদের বলেছেন, আরও কিছু টাকা লাগতে পারে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, এখনও আমরা আমাদের লোককে হাতে পাইনি। উকিল বলেছেন, অর্ডার শিট হাতে পেলে আসামিকে বের করবেন। লকডাউনের এ পরিস্থিতিতে আজ সারাটা দিন শেষ। রিকশাও চালাতে পারিনি, কাজও করতে পারিনি। খুব কষ্ট হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
একই অভিযোগ করে আব্দুল হাকিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়ের জামাইয়ের পানের দোকান (ভ্রাম্যমাণ) আছে। গতকাল রাস্তায় পানের দোকান নিয়ে বের হলে তাকে পুলিশে ধরে নিয়ে যায়, তার নাকি মাস্ক ছিল না। আদালত থেকে আমাদের আসামিকে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একজনকে এক হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি তাকে জামিন করিয়ে দিতে। সেই দুপুর থেকে এসে বসে আছি। এখনও তাকে হাতে পাইনি। কখন তাকে ছাড়বে বুঝতে পারছি না।
ছেলেকে জামিনে ছাড়িয়ে নিতে আদালতে এসেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, আমার ছেলে তার চার বন্ধুসহ গুলশান থেকে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিল। ফেরার পথে তারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়। তিন বন্ধুকে ছেড়ে দিলেও আমার ছেলেকে ছাড়েনি পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ বলছিল, থানায় গিয়ে ২০০ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেবে। কিন্তু তারা আমার ছেলেকে ছেড়ে দেয়নি। ধার করে তিন হাজার টাকা নিয়ে আসছি জামিন করাতে। এমনিতেও কাজ নাই। তার ওপর আবার এ লকডাউনে বাড়তি টাকা লাগছে।
আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর ৬৩৬ জনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক দুই বিচারক শাহিনুর রহমান ও সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা করছেন। জরিমানা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩৪৬ জনকে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে তৃতীয় দিনের মতো শনিবার রাজধানীজুড়ে সক্রিয় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিন বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হওয়ায় ৬২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে (২ জুলাই) ৩২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ১ জুলাই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
টিএইচ/আরএইচ