মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় ৪ জানুয়ারি রাতে দ্রুতগামী ট্রাকের চাপায় নিহত হন টেলিভিশন অভিনেত্রী আশা চৌধুরী। এ ঘটনায় ধাক্কা দেওয়া অজ্ঞাতনামা সেই ট্রাক চালককে এখনো খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাই মামলার একমাত্র আসামি শামীম আহমেদকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দারুস সালাম থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সোহান আহমেদ ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, অভিনেত্রী আয়েশার মামলায় গত ৬ জুলাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। শামীম আহমেদের মোটরসাইকেলের পেছনে বসা আশাকে ধাক্কা দেওয়া ট্রাক চালককে না খুঁজে পাওয়ায় আসামি শামীম আহমেদকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ধাক্কা দেওয়া ট্রাক চালককে গ্রেফতারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে আমরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।

কিন্তু শামীম আহমেদকে অব্যাহতির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান মামলার বাদী ও অভিনেত্রী আশার বাবা আবু কালাম।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হয়। প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি আমাকে বলেন, তদন্ত রিপোর্ট ভালো। তদন্তে শামীমকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নাই। কেনো তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো সেটাও আমি জানি না।’

শামীমের অব্যাহতির বিরুদ্ধে আদালতে কিছু করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কি করব? আমার মেয়ে তো চলে গেছে। আমি এখন আর এগুলো নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে চাই না।’

এদিকে শামীমের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, শামীম বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়টি সিসি ক্যামেরা ফুটেজে আসেনি। দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে অজ্ঞাতনামা একটি ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। সেটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এসেছে। ট্রাকটি খুঁজে না পাওয়ায় অহেতুক সরকারি শ্রম ও অর্থ অপচয় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। আপাতত অজ্ঞাতনামা ট্রাক ড্রাইভারকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।

মামলার এজাহার

ছয়-সাত বছর ধরে আসামি শামীম আহমেদের সঙ্গে আশার পরিচয় ছিল। প্রায়ই শামীম আশাদের বাসায় যাতায়াত করতেন। আশার পরিবারও তাকে বিশ্বাস ও স্নেহ করতেন। মাঝেমধ্যে এবং অভিনয়ের কাজে আসা-যাওয়ায় সহযোগিতা করতেন শামীম। ৪ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে বনানী অফিস থেকে বের হওয়ার সময় আশা তার বাবাকে ফোন করে বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় আসছি।’ তারপর আবার ফোন করে তিনি বলেন, ‘বাড়ির কাজের ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা হয়েছে। কাজ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমি শামীম ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসব।’

এ সময় শামীম ফোনে বলেন, আপনার মেয়ে যেভাবে বলে, সেভাবে কাজ করেন তাহলে ভালো হবে। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে শামীম ফোন করে জানান, ‘আশা আর নেই। টেকনিক্যাল মোড়ে একটি অজ্ঞাত ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করেছে।’

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, শামীম বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে দুই ট্রাকের মাঝখান দিয়ে দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় সামনের ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে আশা মোটরসাইকেলের পেছন থেকে ছিটকে পড়ে যান। এরপর পেছন থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি অজ্ঞাত ট্রাক তাকে চাপা দিলে মাথায় জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই আশা মারা যান। এ ঘটনায় ৫ জানুয়ারি আশার বাবা আবু কালাম বাদী হয়ে মোটরসাইকেলের চালক শামীম আহমেদকে আসামি করে দারুস সালাম থানায় মামলা করেন।

সেদিন যা ঘটেছিল

৪ জানুয়ারি মধ্যরাতে দুর্ঘটনার সময় পেছনে থাকা একটি গাড়ির ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পিকআপের পেছনে মোড় ঘুরতে দাঁড়িয়েছিল আশাকে বহন করা মোটরসাইকেলটি। হঠাৎ করে দ্রুতগতির একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে চালক ডান দিকে এবং আশা বাম পাশে ট্রাকের সামনে গিয়ে পড়েন। ট্রাকে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এ টেলিভিশন অভিনেত্রী। থেঁতলে যায় মুখ। সঙ্গে সঙ্গেই মোটরসাইকেল চালক দৌড়ে গিয়ে দেখেন সড়কে পড়ে আছে আশার নিষ্প্রাণ দেহ।

ঘটনার পরদিন ৫ জানুয়ারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

টিএইচ/এমএইচএস