বাংলাদেশে উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় থাকা করোনা ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্সের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। 

সোমবার (২৬ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান এ নোটিশ পাঠান।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, সারাবিশ্ব এখন নিস্তব্ধ, নিরব ও বিপর্যস্ত একটি অদৃশ্য ভাইরাস কোভিড-১৯ এর কারণে। লকডাউনসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পালন করা সত্ত্বেও সারাবিশ্বে আজ পর্যন্ত প্রায় ৪১ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ ও মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯ হাজার ২৭৪ প্রিয়জন। এটি সবাই স্বীকার করবেন যে, ভ্যাকসিনই সব মানুষকে এই মহামারি থেকে আল্লাহর রহমতে রক্ষা করতে পারে। 

নোটিশে বলা হয়, সারাবিশ্বে ভ্যাকসিন উৎপাদনের দিকে যখন সব দেশের সরকার এবং কোটি কোটি জনগণ তাকিয়ে আছে, তখনই বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত বঙ্গভ্যাক্স ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর অনুমোদন দেয়। তারপর মানবদেহে পরীক্ষামূলক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্ব-১ এবং ২ এর জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের কাছে নৈতিক অনুমোদনের জন্য চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি আবেদন করেন। 

বিএমআরসি ৯ ফেব্রুয়ারি কিছু সংশোধন বিয়োজন করার জন্য চিঠি দিলে গ্লোব বায়োটেক ১৭ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সংশোধিত রিসার্চ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেয়। দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বিএমআরসি সম্পূর্ণ নীরব থেকেছে এবং বাংলাদেশি ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা চালানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি। উপরন্তু বিএমআরসি একেক সময় সংবাদমাধ্যমে একেক রকম বক্তব্য দিয়েছে, যাতে সারাদেশের মানুষ দেশে উৎপাদিত ভ্যাকসিন নিয়ে আশাহত হয়েছে। সর্বশেষ বিএমআরসি গত ২২ জুন একটি চিঠি দিয়ে গ্লোব বায়োটেককে জানায় যে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে বানর বা শিম্পাঞ্জির ট্রায়াল করতে হবে। তবেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ইথিক্যাল অনুমোদন বিষয়ে পরবর্তী চিন্তা করবেন তারা। 

আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, বানর বা শিম্পাঞ্জির শরীরে পরীক্ষা চালাতে হলে থার্ড পার্টি রিসার্চ ল্যাবের প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো গবেষণা ল্যাব নেই। গ্লোব বায়োটেক বানর এবং শিম্পাঞ্জির শরীরে পরীক্ষা চালানোর জন্য ভারত এবং চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা বলেছে এই মুহূর্তে তাদের হাতে সময় নেই এবং দরখাস্ত সরকারের মাধ্যমে করতে হবে, যা খুবই দীর্ঘসময় সাপেক্ষ এবং এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। 

নোটিশে বলা হয়, ফাইজার ও মডার্নার টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার এবং কর্তৃপক্ষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে ভ্যাকসিন তৈরি ও তা প্রয়োগের উপযোগী করে তুলেছে। বঙ্গভ্যাক্স একটি নিউ জেনারেশন টেকনোলজি mRNA প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে আমেরিকা এবং জার্মানির ফাইজার ও মডার্না টিকা। এটি স্পষ্ট যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন না দিয়ে বানরের শরীরে ট্রায়ালের জন্য শর্ত জুড়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে এই ভ্যাকসিনটি যাতে উৎপাদন করতে বা অনুমোদন পেতে আরো অনেক সময় অতিবাহিত হয় এবং এটি যাতে আলোর মুখ না দেখে। 

নোটিশে বলা হয়, গ্লোব বায়োটেক বরাবর বানরের শরীরে পরীক্ষার জন্য যে চিঠি ইস্যু করেছে তা যাতে প্রত্যাহার করে স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পেজ-১ ও ২ এর ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দেন। অথবা ফাইজার ও মডার্না টিকার মতো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলাকালীন সময়ে বানরের শরীরেও প্রয়োগের শর্ত দিতে পারেন।

নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে উচ্চ আদালতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবী।

এমএইচডি/জেডএস