গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত শেখ সায়েরা খাতুন হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নের ‘দুর্নীতি’র ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট এম আনিসুজ্জামান এ রিট দায়ের করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটি দাখিল করা হয়েছে।

রিটে দুদক চেয়ারম্যান, অর্থসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, হেলথ ডিজি, পরিচালক (অর্থ), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

‘হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নের দুর্নীতি, বাথরুম লাইটের দাম ৩৮৪৩ টাকা’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনটি দাখিল করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রূপপুর বালিশকাণ্ডকে হার মানিয়ে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত শেখ সায়েরা খাতুন হাসপাতালের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নে রায়ান হামিদের প্রতিষ্ঠান ‘বিডি থাই কসমো লিমিটেড’ ১৫ ওয়াট বাথরুম লাইটের দাম ধরেছে তিন হাজার ৮৪৩ টাকা, যার বাজারদর ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকা। 

১৮ ওয়াট এলইডি সারফেস ডাউন লাইটের দাম ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৫১ টাকা, যার বাজারদর সর্বোচ্চ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এলইডি ওয়াল স্পট লাইট ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৫৬ টাকা, যার বাজারদর ৩০০-৪০০ টাকা। এমন ২৪ ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে একটি টেলিভিশনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারের পর তোলপাড় চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিডব্লিউডির তালিকাভুক্ত না হলেও রায়ান হামিদের প্রতিষ্ঠান ‘বিডি থাই কসমো লিমিটেড’ এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের চাপে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। নিলাম প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানের দাম ‘বিডি থাই কসমো লিমিটেড’ (কসমো লাইটিং) থেকে অনেক কম। ১৫ ওয়াট বাথরুম লাইট তিন হাজার ৮৪৩ টাকার যে দাম ধরেছে, দরপত্রে থাকা আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৭১৫ টাকায় সেটি দিতে চাইলেও  তা নেয়নি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

গণপূর্ত অধিদফতরে খোজ নিয়ে জানা যায়, এসব সরঞ্জাম সরবরাহের তালিকাভুক্ত নয় বিডি থাই কসমো লিমিটেড। তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করলেও প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, টিউব আর বাতি। বাকি কিছু এনলিস্টেড হয়নি। প্রসেসে আছে। তারা আবেদন করেছেন। লাইট ফিটিং, ব্রাকেট লাইট, টিউব ফিটিং এগুলো। এগুলো সহসা হবে না। আমরা করব না। আবেদন চলে গেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

বিডি থাই কসমো লিমিটেডকে এই কাজ দিয়েছে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সিলেকশনেই হয়েছে সব। 

ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের (এজিএম তড়িৎ) আবদুন নাঈম সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে যোগাযোগ করুন। সবকিছু জানতে পারবেন। অধিদফতর যা করবে, যা দেবে, যা সিলেক্ট করবে, আমরা তা দিতে বাধ্য। তবে বিডি থাই কসমো লিমিটেডকে কাজ দিতে সুপারিশের কথা অস্বীকার করেন তড়িৎ প্রকৌশলী মো. আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, আমরা কোনো সিলেকশন দিইনি। আমরা কোয়ালিটির কথা বলব। তারা কোথা থেকে আউটসোর্স করবে, সেটা তাদের বিষয়। আমরা বলছি, শিডিউলের চাহিদা অনুযায়ী দিতে হবে। বিডি থাই কসমো লিমিটেডের মালিক রায়ান হামিদ বলেন, প্রস্তাবিত দামের ওপর পরে ডিসকাউন্ট করে দেওয়া হয়েছে।

এমএইচডি/আরএইচ