চিত্রনায়িকা পরীমণির জামিন আবেদন শুনানির জন্য ২১ দিনের বিরতি দিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে নিম্ন আদালতের আদেশ জামিন আবেদন খারিজের সামিল বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

পরীমণির আবেদনের শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘জামিন আবেদনের বিষয়ে নিম্ন আদালত রীতিনীতির বাইরে গিয়ে আদেশ দিয়েছেন। ২১ দিন পর আদেশ দেবেন, এটা জামিন আবেদনটি খারিজ করার সামিল।

শুনানিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় করা পরীমণির জামিন আবেদনের বিষয়ে অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান বলেন, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে যে জামিন আবেদনটি করা হয়েছিল সেটি না শুনে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে। এই আদেশের বিরুদ্ধেই আমরা এসেছি।

এক পর্যায়ে হাইকোর্ট জানতে চান, মহানগর দায়রা জজ আদালতে ২৩ তারিখ যে আবেদন (জামিন দ্রুত শুনানির আবেদন) করেছিলেন সেটি কী করেছেন?

জবাবে আইনজীবী বলেন, এই আবেদনটি এন্টারটেইনই (আমলে নেয়নি) করে নাই। কোর্ট বলেছেন, আমি এটা এন্টারটেইনই করব না। আমারা প্রসিকিউশনকে রিকোয়েস্ট করেছি আবেদনটি দেখার জন্য। তারাও সেটি দেখতে অস্বীকার করেছে। এরকম অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে আমরা এই হাইকোর্টে এসেছি।

আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, আদালতের কাছে প্রার্থনা মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরীমণিকে জামিন দেবেন। আর মহানগর দায়রা জজ আদালতের আদেশটা অবৈধ। কারণ মামলার পারিপার্শ্বিকতা এবং অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী তা অবৈধ।

হাইকোর্ট বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী মহানগর দায়রা জজ আদালতের ও এই আদালতের একই এখতিয়ার। ফলে প্রতিপক্ষকে না শুনে পূর্ণাঙ্গ কোনো আদেশ আমরা দিতে পারব না।

এরপর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্নার বক্তব্য শুনতে চান আদালত।

আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, এ মামলাটি নিয়ে আমার কিছু কথা আছে। এই মহিলাকে (পরীমণির) গ্রেফতার করার ২৬ ঘণ্টা পর মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর রিমান্ডের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের কিছু নির্দেশনা আছে। যার একটাও নিম্ন আদালত অনুসরণ করেনি। নিম্ন আদালতই যদি অনুসরণ না করে তবে কে অনুসরণ করবে?

শুনানিতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মহানগর দায়রা জজ আদালতের আদেশটি বেআইনি নয় বলে দাবি করেন।

হাইকোর্ট বলেন, রেকর্ড দেখে আমরা বুঝতে পারছি বেআইনি কিছু আছে। কিন্তু আমরা আইন এবং রীতিনীতির বাইরে কিছু করবো না। কিন্তু জামিন আবেদনের বিষয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালত রীতিনীতির বাইরে গিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ২১ দিন পর জামিন আবেদনের শুনানি, এটা জামিন আবেদনটি খারিজ করার সামিল।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তখন বলেন, সে তো (মহানগর দায়রা জজ আদালত) শুনানির জন্য রেখেছেন, তার সামনে তো অন্যান্য রেকর্ড থাকতে হবে। তাছাড়া তো তিনি আদেশ দিতে পারেন না।  

তখন হাইকোর্ট বলেন, উনি (মহানগর দায়রা জজ আদালত) না শুনলে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত আছে, তারা শুনবে। কিন্তু এত লম্বা তারিখ দেওয়ার কী আছে? পরে আদালত রুল জারি করেন।

গত ২২ অগাস্ট পরীমণির পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন রাখেন।  

মহানগর দায়রা জজ আদালতের আদেশটি চ্যালেঞ্জ করে বুধবার হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমণির আইনজীবী মজিবুর রহমান। সে আবেদনের সঙ্গে পরীমণির জন্য জামিনও চাওয়া হয়। এরপর আদালত পরীমণিকে জামিন না দিয়ে তার আবেদন শুনানি প্রশ্নে রুল জারি করেন। রুলে রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমণির জামিন আবেদন আদেশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। 

এছাড়া পরীমণির জামিন আবেদন শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে নিম্ন আদালতের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশকে আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এমএইচডি/এসএম