কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে তলবের আদেশের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, 'সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা ও আইনানুযায়ী ভোটকেন্দ্রে বিচারিক দায়িত্ব পালন করছিলেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসান। কিন্তু দায়িত্বরত একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ওই পুলিশ সুপার যে আচরণ করেছেন তা আদালত অবমাননার শামিল। পুলিশ সুপারের এ কর্মকাণ্ড শুধু বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপই নয় বরং পুরো বিচার বিভাগের প্রতি প্রচণ্ড আঘাতের শামিল। উনার এ কর্মকাণ্ডকে আমরা (আদালত) এড়িয়ে যেতে পারি না। এছাড়া এটাকে হালকাভাবে নেওয়ারও সুযোগ নেই। উনি শুধু গুরুতর আদালত অবমাননাই করেননি, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ন করেছেন।' 

বুধবার (২০ জানুয়ারি) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ লিখিত আদেশে এ পর্যবেক্ষণ দেন।

একইসঙ্গে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ব্যাখ্যা দিতে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে তলব করেন হাইকোর্ট। আগামী ২৫ জানুয়ারি তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। 

এর আগে ১৯ জানুয়ারি কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের সঙ্গে পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টে আসে।

এসপি তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা একটি আবেদনের কপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এর অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজির দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে।

আবেদনে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসান বলেছেন, ‘কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ জানুয়ারি হতে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। এরপর ১৬ জানুয়ারি আমার দায়িত্ব পালন অবস্থায় সকাল ১০টায় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবস্থান কালে এক ভোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে কতিপয় ব্যক্তিকে ভোট কেন্দ্রের বুথের ভেতর লম্বা বেঞ্চে পুলিং এজেন্টদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখি। তখন তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা পরিচয় পত্র না দেখিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত এ ফোর সাইজের কাগজ দেখান। আমি সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বুথের বাইরে ডাকি। কথা বলা শুরু করতেই ওই ভোট কেন্দ্রে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতসহ ৪০/৫০ জন ফোর্সসহ প্রবেশ করেন।

তিনি প্রবেশ করেই প্রিজাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন। তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সঙ্গে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। তখন আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বলি প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে একটি বিষয়ে কথা বলছি। কথা শেষ হলে উনাকে নিয়ে যান। এরপরেও এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান ধমক দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আমার দিকে অগ্রসর হন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কে? কি করেন এখানে? আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্তস্বরে বলেন, আপনি এখানে কি করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান এখান থেকে। আমি পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমান্তক চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকি।

এরপর এসপিসহ তার সঙ্গী ফোর্সরা আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্যে করে একাধিকবার বলেন, এসব লোককে কে পাঠায় কে? বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কি আপনার ? বের হয়ে যান এখান থেকে। তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি।

আবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ সুপার ও তার সঙ্গী ফোর্সদের আচরণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৬৯, ৭০, ৭৪, ৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রার্থনা করছি। গতকাল রাতে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এমএইচডি/এসএম