স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই জিএইচসি ওয়েবসাইটে ভুয়া সনদ আপলোড
সংগৃহীত ছবি
সৌদি আরব গমনেচ্ছুক যাত্রীদের দূতাবাস নিবন্ধিত নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়। পরে সংশ্লিষ্ট ওই হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই যাত্রীদের স্বাস্থ্য সনদ গালফ হেলথ কাউন্সিলের (জিএইচসি) ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেয়।
এবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করেই জিএইচসির ওয়েবসাইটে ভুয়া স্বাস্থ্য সনদ আপলোড করার অভিযোগ উঠেছে ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে নিবন্ধিত এক প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ৭২৯টি জাল ভুয়া স্বাস্থ্য সনদ জিএইচসির ওয়েবসাইটে আপলোড করেছেন ওই দুই কর্মকর্তা।
এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাহবুব জামাল গত ২৪ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির আইটি ডিপার্টমেন্টের প্রধান ও এইচ আর ফাহিম আহমেদ এবং আইটি ডিপার্টমেন্টের এক্সিকিউটিভ সামসুল আরেফিনকে আসামি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
পরে গত ১৩ জানুয়ারি ফাহিম আহমেদকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করেন পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক ফাহিমকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, রাজধানীর গুলশান-১ এ ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ৮৯.৮৯ শতাংশের মালিক মাহবুব জামাল এবং বাকি ১১. ১১ শতাংশের মালিক আসামি ফাহিম আহমেদ। তাছাড়াও ফাহিম আহমেদ প্রতিষ্ঠানটির এইচ আর ও আইটি ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। মামলার অপর আসামি সামসুল আরেফিন আইটি ডিপার্টমেন্টের এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির কাজ হলো পরীক্ষার পর বিদেশগামী যাত্রীদের স্বাস্থ্য সনদ জিএইচসি ওয়েবসাইটে আপলোড করা। যদি এই মেডিকেল রিপোর্ট জিএইচসিতে আপলোড করা না হয়, তাহলে যাত্রীরা বিদেশে যেতে পারেন না।
মামলার বাদী মাহবুব জামাল শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে পারেননি। গত ২ নভেম্বর জিএইচসির ওয়েবসাইট এবং পাসওয়ার্ড চাইলে আসামি ফরিদ আহমেদ পরদিন দেবেন বলে জানান। কিন্তু পরদিন ফরিদ কিছু না বলেই অফিসে আসা বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে তার সঙ্গে বারবার ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে অপর আসামি শামসুল আরেফীন ও অফিসে আসা বন্ধ করে দেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, গত ১৭ ডিসেম্বর মামুন নামে এক ব্যক্তি ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসে জানান, গত ২৬ নভেম্বর তিনি সেখান থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন। তবে তাকে যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ দেয়া হয়েছিল, সেটি তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। এজন্য নতুন করে আরেকটি স্বাস্থ্য সনদ ইস্যু করতে আগের সনদের একটি ফটোকপিও জমা দেন।
সৌদি গমনেচ্ছুক মামুনের আবেদনের ভিত্তিতে রেজিস্টার বুক যাচাই করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখে সেখানে তার নাম নেই। অর্থাৎ তার কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষাই করানো হয়নি। বিষয়টি সন্দেহ হলে ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিকের মালিক মাহবুব জামাল হাসপাতালের লোকাল সফটওয়্যার (এর মাধ্যমে রিপোর্ট আপলোড করা যায় না, শুধু চেক করা যায়) দিয়ে জিএইচসির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন।
তিনি দেখতে পান, কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই জিএইচসির ওয়েবসাইটে মামুনের সনদ আপলোড করা হয়েছে। পরে স্বাস্থ্য সনদ পুনরায় ইস্যু করতে নজরুল ইসলাম ও সাইফুল্লাহ নামে আরও দুইজন এলে তাদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। এমনকি তাদের দেওয়া মূল স্বাস্থ্য সনদে ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. কাজী আফসানা মিমুর স্বাক্ষর পাওয়া যায়। জাল স্বাস্থ্য সনদে স্বাক্ষর থাকার বিষয়টি ডা. কাজী আফসানা মিমুর কাছে লিখিতভাবে জানতে চাইলে জবাবে ওই চিকিৎসক জানান, এগুলো তার করা স্বাক্ষর নয়, সবগুলোই জাল।
এজাহারে মাহবুব জামাল বলেন, জিএইচসির ওয়েবসাইটে জাল সনদ আপলোডের বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। সেখানে গত নভেম্বরে ২৭৪টি এবং ডিসেম্বরের ২২ তারিখ পর্যন্ত ৪৫৫টি, সর্বমোট গত দুই মাসে ৭২৯টি জাল স্বাস্থ্য সনদ জিএইচসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। বাদীর অসুস্থতার সুযোগে আসামি সামসুল আরেফীন ও মো. ফাহিম আহমেদ পলক প্রতিষ্ঠানের লোকাল সফটওয়্যারের মাধ্যমে জাল স্বাস্থ্য সনদ জিএইচসির ওয়েবসাইটে আপলোড করেছেন। এভাবে তারা সৌদি গমনেচ্ছুকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন
বাদী পক্ষের আইনজীবী ইকতান্দার হোসাইন হাওলাদার বাপ্পি ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাল বা ভুয়া মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করা এবং চিকিৎসকের স্বাক্ষর নকল করা গুরুতর অপরাধ। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আদালত অভিযুক্ত আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
টিএইচ/এমএইচএস