আদালতে পি কে হালদারের বান্ধবী অবন্তীকা বড়াল/ ফাইল ছবি

অর্থআত্মসাৎ ও পাচার করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সহযোগী ও বান্ধবী অবন্তীকা বড়ালকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। এ দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন অবন্তীকাকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

এর আগে ১৩ জানুয়ারি তারা তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১৩ জানুয়ারি সকালে ধানমন্ডির ১০নং সড়কের একটি বাসা থেকে সংস্থাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে।

গত ২৮ ডিসেম্বর পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বান্ধবী অবন্তীকা বড়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছিল। তবে ওই সময় তিনি হাজির হননি।

অবন্তীকার অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, পি কে হালদার তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী এবং পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তীকা বড়াল মিলে প্রথমে ‘সুখদা’ নামে একটি কোম্পানি গড়ে তোলেন। এরপর ‘সুখদা’র শেয়ার দিয়ে খোলেন হাল ইন্টারন্যাশনাল। এই হাল’র পরিচালক হন প্রীতিশ ও তার স্ত্রী সুস্মিতা। আবার এই হালের ৯০ ভাগ শেয়ারের মালিক হন সুখদার পক্ষে প্রশান্তের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তীকা।

হাল ক্যাপিটালের ৯০ শতাংশ শেয়ারের মালিক থাকে হাল ইন্টারন্যাশনাল। বাকি ১০ ভাগ রাখা হয় হাল ক্যাপিটালের দুই কর্মচারীর নামে। তারাই হাল ক্যাপিটালের নামে আগে থেকে বিদ্যমান মাইক্রোটেকনোলজি নামে একটি কোম্পানির শেয়ার কেনেন। যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদার ওই প্রতিষ্ঠানসহ পিপলস লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পরপরই প্রশান্ত কুমার হালদারের নাম উঠে আসে। 

পি কে হালদারের দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতায় এখন পর্যন্ত ৮৩ ব্যক্তির বিভিন্ন হিসাবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ফ্রিজ করেছে দুদক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সহায়তায় বিভিন্ন সময়ে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের ৩৯ কোম্পানির শতাধিক ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত ওই টাকা ফ্রিজ করা হয়। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করে ইন্টারপোল।

‘বান্ধবীদের’ কোটি কোটি টাকা পাঠিয়েছেন পি কে হালদার

গত বছরের ২০ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী পি কে হালদারকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলে পাঠানো হয়েছে।

দুদক আইনজীবী আরও জানান, পি কে হালদারের ৭০/৮০ জন গার্লফ্রেন্ডের সন্ধান পেয়েছে দুদক। এদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। আমরা সেসব অ্যাকাউন্ট অনুসন্ধান করছি।

টিএইচ/এফআর