প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আমার চলে যাওয়ার সময় এসেছে। যিনি আমার উত্তরসূরি আসবেন তাকে বলবো, ভার্চুয়াল কোর্ট ব্যবস্থাকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এটাকে অনেক সামনে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের মুক্তি হলো ভার্চুয়াল কোর্টে। এখনও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিল্ডিং হয়নি সব জায়গায়। ২০০৭ সালে জুডিশিয়ারি পৃথক হয়েছে। এখনও সব জায়গায় ভবন হয়নি। আমরা বিচারক দুই তিনগুন করবো। তাদের কোথায় বসাবো।

‘একমাত্র ভার্চুয়াল কোর্ট যদি প্রবর্তন করা যায় তাহলে বিচারকরা বাসায় থেকে বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারবেন। আইনজীবীদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তাহলে অচিরেই আমরা মামলার জট থেকে মুক্তি পাব। তাছাড়া মামলার জট থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। ই-ফাইলিং ব্যবস্থা হলে ২৪ ঘণ্টা ফাইল করা যাবে। ভারতে ২৪ ঘণ্টা ফাইল করা যাচ্ছে। আমার যে উত্তরসূরি আসবে তিনি যদি এটা করেন বিচার বিভাগে একটা বিপ্লব ঘটে যাবে।’

‘শুধু তাই নয়, এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যে জায়গায় যাচ্ছে, শুধু মুখে কথা বলবেন লেখা হয়ে যাবে, কষ্ট অনেক কমে যাবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এমন জায়গায় যাবে যে জুডিশিয়ারিতে কোনো পেন্ডিং মামলা থাকবে না। কিন্তু এ প্রযুক্তির সৎ ব্যবহার করতে হবে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমার পরে যারা আমার উত্তরসূরি আসবেন আমি আশা করি তারা এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

বুধবার (১ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে ডিজিটাল আর্কাইভিং এবং ই-ফাইলিং (কোম্পানি অ্যান্ড এডমিরালিটি ম্যাটার) সফটওয়্যার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

প্রধান বিচারপতি ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘যখনই আমাদের ডিজিটাল কোর্টের প্রবর্তন হলো, আমার এখনও খেয়াল আছে ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম, আমরা জজ সাহেবরা ১০ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে টাকাটা দিয়ে বললাম, কোর্ট তো ফাংশান করছে না। সারা পৃথিবীতে কোর্ট চলছে। বাংলাদেশে শুধু কোর্ট চলছে না। তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, ভার্চুয়াল কোর্ট করেন। পরে ভার্চুয়াল কোর্টের আইন আমরা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে করেছি। এজন্য আমি মাননীয় আইনমন্ত্রী, বিচারপতি ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে ধন্যবাদ দেব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় আইনমন্ত্রীর কাছে আমি চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব। কারণ বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, জেলখানা আমার পক্ষে কন্ট্রোল করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু একটা করেন।  তারপরে ভার্চুয়াল কোর্ট হওয়ার পর এক লাখ লোকের জামিন হয়েছে ভার্চুয়াল কোর্ট থেকে।

 সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমি আবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আপনি তো ভার্চুয়াল কোর্ট করে দিয়েছেন। এখন তো ভার্চুয়াল কোর্ট ভালোভাবে চলছে না লজিস্টিকের অভাবে। তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘এটা তো আমাকে প্রথমেই বলা উচিত ছিল’। আপনার কত টাকার প্রয়োজন। আমি বললাম আপাতত ১০ কোটি টাকা দিলে অ্যাপস ট্যাপস এগুলো কিনবো। তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে কি কেউ ১০ কোটি টাকা চায়’। আমি একটু লজ্জা পেলাম। তারপরে প্রধানমন্ত্রী মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রীকে বললেন, ‘প্রধান বিচারপতি যা কিছু চাইবে, সব তাৎক্ষণিক দিতে হবে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী সব দিয়েছেন। এরপর আমি সব কিছু চালু করতে পেরেছি। সুতরাং এটা আমার কাছে বেশি সাফল্য।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা যদি এটা আর্কাইভ করে রাখতে পারি। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। আমি আশা করি আমরা অচিরেই এটা করতে পারব। মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর প্রতি আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ। তার সঙ্গে আমি দুটি মিটিং করেছি। তিনি আমাদের ফুল সাপোর্ট দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, টাকা কোনো সমস্যা না। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে শুধু সুপ্রিম কোর্টের কাজ করার জন্য ২২০ কোটি টাকা দিয়েছেন। যেখানে আমরা ভার্চুয়াল কোর্ট শুরু করেছি ১ লাখ ডলার দিয়ে। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছে ২২০ কোটি টাকা। এখানে হচ্ছে একটা ডেটা সেন্টার। যেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে আমাদের সমস্ত কিছু থাকবে। এটার জন্য খরচ হবে ১৫০ কোটি টাকা।

মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও আইসিটির উপদেষ্টা আমাদের যেইভাবে সাপোর্ট করেছেন, আমার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমি তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। একজন প্রধান বিচারপতির সময় কোর্ট বন্ধ থাকা, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আমার জীবনে বোধ হয় কোনো ঘটনা ঘটেনি। সুতরাং আমি যে কোর্ট চালু রাখতে পেরেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় আইনমন্ত্রী, আইসিটি উপদেষ্টা, আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ।’

আগামী ৩১ ডিসেম্বর বর্তমান প্রধান বিচারপতির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

এমএইচডি/এসএম