ইভ্যালির প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় আগাম জামিন পেয়েছেন গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খান। জামিন পাওয়ার পর তাহসান খান বলেন, এরপর থেকে চিন্তাভাবনা করে কোনো কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। ভবিষ্যতে ডেফিনিটলি আরও সতর্ক হয়ে কাজ করব।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে আইনজীবী সানজিদা খানমের কাকরাইলের চেম্বারে আসেন তাহসান খান। সেখানে তিনি অনেকটা ‘আইনজীবী’র পোশাকে হাজির হন। তার গায়ে ছিল কালো কোট, সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। শুটিং স্পট থেকে সরাসরি তিনি চেম্বারে আসেন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ভার্চুয়ালি জামিন শুনানি শুরু হয়। শুনানিকালে পুরো সময় তিনি আইনজীবীর চেম্বারে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আরও পড়ুন :  তাহসানের ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন

পরে ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তাহসান খান বলেন, ২০ বছর ধরে বিনোদন জগতে কাজ করছি সততার সঙ্গে। আমার যত অর্জন, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো মানুষের ভালোবাসা। এ কারণে বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করার আমন্ত্রণ জানায়। কোম্পানি কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেটা শুভেচ্ছা দূত হিসেবে আমরা জানি না। আপনারা বলতে পারেন, এরকম একটা কোম্পানি যারা বিতর্কিত, তাদের সঙ্গে কেন কাজ করলেন। কিন্তু দেখুন, ১ বছর আগে যখন তারা আমাকে আমন্ত্রণ জানায় তখন রিয়েলিটি ডিফারেন্ট ছিল। তখন কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভিতে ইভ্যালির বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে। 

‘আমরা কেউ তো জানতাম না এক বছর পরে কোম্পানিটির কী হবে। যদি কোম্পানি অসচ্ছভাবে পরিচালিত হয় তার দায়ভার কর্তৃপক্ষের। অপরাধ যদি হয় তাহলে কর্তৃপক্ষের শাস্তি হবে। কিন্তু যারা অপরাধী নয় তাদের হয়রানি করাটা কামনা করি না। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের প্রক্রিয়া তো লম্বা। আমি ভক্তদের কাছে দোয়া চাই যেন এর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারি’- বলেন তাহসান।

অভিনেতা তাহসান খানের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম

হাইকোর্ট বলেছেন, সেলিব্রেটিদের দায়িত্ব অনেক বেশি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহসান খান বলেন, ‘সেলিব্রেটিদের দায়িত্ব আছে বলেই তো আমি কোনো বিজ্ঞাপন করার আগে চিঠি দিয়ে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছি। গত বছর মার্চে যখন সাইন করি, তারপর আসলে বিজ্ঞাপনও কিছু করিনি। দুটো লাইভের পরে আমার কাছে পরিচিত মানুষরা যখন কমপ্লেইন শুরু করে তখন আমি বুঝতে পারি এবং চিঠি দিয়ে চুক্তি বাতিল করি।’

নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে চুক্তি বাতিল করেছি মন্তব্য করে তাহসান খান বলেন, ‘এটা আসলে লার্নিং এক্সপেরিয়েন্স। এরপর থেকে আসলে অনেক চিন্তাভাবনা করে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে হবে। আপনাদের প্রতিও আমাদের অনুরোধ থাকবে বাস্তবতাটা অর্থাৎ সময়ের কথাটা বলতে হবে। তখন যেভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় ইভ্যালির প্রচার হচ্ছিল, শুধু আমি যে প্রভাবিত হয়েছিলাম তা কিন্তু নয়। বড় বড় প্রোগ্রামের স্পন্সর হয়ে তারা কাজ করেছে।’

আরও পড়ুন : সেলিব্রেটিদের আরও সতর্ক হতে বললেন হাইকোর্ট

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তাহসান খান বলেন, ‘অভিযোগের তীর যদি শুধু আমার দিকে আসে, আমি মাথা পেতে নেব। আমি আসলে কোম্পানির হয়ে কোনো অপরাধ করিনি। ভবিষ্যতে ডেফিনিটলি আরও সতর্ক হয়ে কাজ করব। সতর্ক তো হতেই হবে। এতটুকু বুঝতে পেরেছি, কাজ করার পরিধি যত বাড়ে, বিড়ম্বনাও তত আসে।’

ইভ্যালির প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় অভিনেতা ও গায়ক তাহসান খানকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ভার্চুয়াল আদালতে তাহসান খানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মো. জহিরুল ইসলাম, মশিউল আলম, শফিকউল্লাহ চৌধুরী ও শফিকউল্লাহ মিয়া।

এমএইচডি/এসএম/জেএস