মডেল: সজীব ও শামস

মায়েদের ভালোবাসা কিংবা উদারতার গল্প আমরা যতটা ভালোবেসে লিখি, বাবাদের ক্ষেত্রে কেন যেন ততটা লিখতে পারি না। একটা জীবন যিনি নিজের আগে আমাদের জন্য চিন্তা করে যান, তার ভালোবাসা কেন আমাদের চোখে পড়েও পড়ে না! কেন শুধু বাবা দিবস এলেই ‘বাবা, তোমাকে ভালোবাসি’ বলে সরগরম করে রাখি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর বড় কারণ হলো আমরা আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন, ভালোবাসা পেয়েও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে করি কার্পণ্য।

দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি যে, আমাদের বেশিরভাগেরই ধারণা হলো, মা-বাবা সারা জীবন শুধু আমাদের জন্য ত্যাগ করেই যাবেন। যেন আমাদের করার কিছু নেই, যেন আমরা যেটুকু করি তাই অতিরিক্ত! এই ভুল ধারণা আমাদের একটু একটু করে দূরে সরিয়ে নেয় মা-বাবার থেকে। কৃতজ্ঞতাবোধের অভাব আমাদের নামিয়ে দেয় মানুষের সর্বনিম্ন স্তরে। তাই আমাদের সবার আগে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে হবে, জীবনের সব পর্যায়ে থাকতে হবে কৃতজ্ঞ।

বাবা যেমন আপনার ছেলেবেলা রঙিন করে রেখেছিলেন, তার জীবনের পড়ন্ত বেলায় সাদা-কালো সময়টাকে ততটাই রঙিন করে রাখছেন তো? আপনার শত আবদার বাবা পূরণ করেছেন, তার হয়তো বছরের পর বছর ঈদে কেনা হয়নি নতুন পোশাক, তবু এতটুকু অপূর্ণতা আপনার রাখেননি। আপনার প্রিয় সাইকেলটি কিনে দিতে গিয়ে বাবাকে হয়তো হেঁটে অফিসে যেতে হয়েছে অসংখ্য দিন। কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে থাকার জন্য এইটুকুই কি যথেষ্ট নয়?

কাছের মানুষগুলোকে আমরা কখনো আলাদা করে ভালোবাসি কেন বলি না, জানেন? কারণ আমাদের মুখের কথা নয়, কাজের মাধ্যমে জানান দিতে হয় তাদের প্রতি ভালোবাসার কথা। আমাদের ছোট ছোট কাজ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হয়, তারা আমাদের কাছে কতটা বিশেষ মানুষ। যদি আপনার মা এবং বাবার মুখের হাসির কারণ হন, আপনার পৃথিবী কোনোদিন বিবর্ণ হবে না। প্রত্যেক ধর্মেই মা-বাবাকে রাখা হয়েছে সম্মানিত স্থানে। তাদের প্রতি ভালোবাসাটুকু জানান দিতে পারলেই জীবন নামের পরীক্ষায় আপনি পাস করে যাবেন।

কেবল একটি দিন নয়, বছরের সবগুলো দিন হোক মা-বাবাকে ভালোবাসার। আপনি চাইলে একটি দিন তাদের জন্য একটু বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসা প্রকাশ করতেই পারেন। তার মানে যেন এমন না হয় যে, বছরের অন্যান্য সময়ে তারা আপনার ভালোবাসার অভাব বোধ করেন। যাদের কাছ থেকে জন্ম, যাদের কাছে বেড়ে ওঠা, যাদের কাছে পড়ে আছে শৈশব-কৈশরের অসংখ্য স্বপ্ন পূরণের গল্প আর এক জীবনের ঋণ, তাদের থেকে দূরে সরে যেন না যান। যেখানেই থাকুন, প্রতিটি মুহূর্ত যেন জানান দেয়- ‘বাবা, তোমাকে ভালোবাসি’। বাবা দিবসের প্রতীজ্ঞা হোক এটুকুই।