মানুষের বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টির দরকার। বেশিরভাগ মানুষ যখন পুষ্টির কথা ভাবেন, তখন শুধু স্বাস্থ্যকর খাবারই প্রাধান্য পায়। পুষ্টিকর খাবার শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই অপরিহার্য, কিন্তু আপনার আত্মার ক্ষুধা মেটাতে কি যথেষ্ট? সত্যিকার স্বাস্থ্যের অর্থ শারীরিক অবস্থার চেয়েও বেশি কিছু। এর সঙ্গে মানসিক, আত্মিক, সংবেদনশীল ও আধ্যাত্মিক অবস্থাও অন্তর্ভুক্ত। যদি এসব ক্ষেত্রের ভারসাম্য না থাকে তাহলে এটি স্বাস্থ্য এবং সুখের সামগ্রিক প্রাণবন্ত অবস্থা তৈরি করতে পারে না। আমরা শুধু শারীরিক পুষ্টির জন্যই খাবার খাই তা কিন্তু নয়।

শরীর ভালো রাখতে হবে, তাই পুষ্টিকর খাবার খেতে ভালো না লাগলেও খেতে হবে তা নয়। নিজেকে ফিট রাখতে হবে, আকর্ষণীয় লাগতে হবে, হালের ফ্যাশনেবল জিরো ফিগার হতে হবে, এই চেষ্টা চালাতে গিয়ে নিজের আত্মাকে না জানি কতজন কষ্ট দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত! ক্যালরি মিটারের অতিরিক্ত কিছু খেয়ে ফেললেই অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন অনেকেই। তারা তখন ভাবতে থাকেন, ‘আমার এটা খাওয়া কোনোমতেই উচিত হয়নি- এটা তো খুবই অস্বাস্থ্যকর’, ‘আমার না আজকে থেকে ব্যায়াম করার কথা ছিল! হায় রে!- আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না’, ‘আমি আজকে থেকে ২ সপ্তাহের জন্য ডিটক্স জুস খাব- একদম ফাইনাল’, ‘আমি কাল থেকেই আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করব।’

ওপরের কথাগুলো খুবই পরিচিত লাগছে? ইচ্ছাগুলো প্রশংসনীয় ও সুন্দর। প্রতিদিন ছোট ছোট টার্গেট সেট করে সেখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করা ভালো। এতে মন ও শরীর কোনো কিছুর ওপরই চাপ পড়ে না। মনে রাখা উচিত আমরা ভালো খাওয়ার অভ্যাস করি সুস্থ থাকতে, কিন্তু যদি সেই স্বাস্থ্যকর অনুশীলন প্রতিনিয়ত কষ্টের কারণ হয়, তাহলে তা দীর্ঘস্থায়িত্ব হারাবে অতি দ্রুত। পুষ্টিকর ভালো খাবার খাওয়ার পাশাপাশি মনকে আনন্দ দেয় এমন কিছু খাবার মাঝে মাঝে মনের পুষ্টির জন্য দরকার। এমন ডায়েট বা অনুশীলন করা উচিত নয় যা মন বা শরীরকে কষ্ট দেয়। স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত পরিশ্রম, নিজের যত্ন সবকিছুই নিয়ম মানতে হবে তাই, কিংবা  সুন্দর দেখাতে হবে, মানুষকে দেখাতে হবে সেজন্য না করে বরং আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করে করুন। তার মানে এই নয়, আমি বলছি কেউ ডায়েট না করুক কিংবা ফিট না থাকুক। আমি শুধু বলতে চাইছি সবকিছুতে একটা সামঞ্জস্য বা ব্যালান্স থাকা উচিত।

কিছু অনুশীলন মেনে চলুন

* মাঝে মাঝে নিয়ম ভেঙে প্রিয় খাবারগুলো উপভোগ করুন নির্দ্বিধায়।

* বন্ধুদের সঙ্গে মজাদার কোনো রেস্টুরেন্টে পার্টি উপভোগ করুন। হতে পারে আপাতদৃষ্টিতে এটি খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। কিন্তু আপনার আত্মার পুষ্টির জন্য এটি খুবই প্রয়োজন।

* সপ্তাহে দুই দিন যোগাভ্যাস করুন। সবাই করে বা করতে হবে বলে নয়, আপনার নিজের আত্মার/মনের পুষ্টির জন্য এটি করুন।

* মাঝে মাঝে রুটিন ভেঙে মন যা চায় তা করে দেখুন, মনের খোরাক মেটান।

* ইতিবাচক মানুষের সংস্পর্শে থাকুন, প্রাণ খুলে হাসুন।

* প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন। হতে পারে সেটি সৃজনশীল কিছু কিংবা ব্যক্তিগত বিকাশের কোনো কোর্স। এসব কাজ আপনাকে ভালো থাকতে সাহায্য করবে।

এইচএন/এএ/এমএমজে