ছবি: প্রতীকী

ছোট্টবেলা থেকে আমি মাকে ঠিক যেভাবে পাওয়া দরকার ছিলো সেভাবে পাইনি। কারণ আমার মা ছিলেন চাকুরিজীবি। নিজের কর্মক্ষেত্র- ঘর -সংসার -সন্তান- একা হাতে সামলে গেছে বিরতিহীনভাবে। আমার শৈশবও আর পাঁচটা শিশুর মতো কাটেনি। শুধুমাত্র  স্কুল আর বাসার গন্ডির মধ্যে ছিল আমার জগৎ। নিজেই নিজের খেলার সাথী ছিলাম, মা অফিস শেষে মাঝেমধ্যে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে দেরি করলে মনে একটা অদ্ভুত ভয় কাজ করতো। একা একা কান্না করতাম। খুব কাঁদতাম। তখন তো আর বুঝতাম না স্ট্রাগলের সংজ্ঞা কী! বুঝতাম না কাজের চাপ আর ঢাকার ট্রাফিকের বাস্তবতা!

আমার বাবা-মায়ের অফিসমুখী কর্মব্যাস্ত জীবনে সেভাবে আমার জন্য আলাদা করে সময় দেয়া হয়ে ওঠেনি কারোই। সন্ধ্যায় মা বাসায় ফিরে বুঝতে পারতো হয়তো কান্না করেছি কিন্তু সেই মুহুর্তে আদর না দিয়ে ফ্রেশ হয়েই রান্নাঘরে কাজে ব্যস্ত হয়ে যেত। সেইসঙ্গে সারাদিনের যা যা পড়া দেয়া ছিলো সেগুলো তৈরি করার তাড়া দিত। জ্বর এলে মায়ের কোলে জ্বর জ্বর চোখে কোনো অবদার কখনোই করা হয়নি। কারণ ততদিনে আমার একমাত্র ভাই পৃথিবীতে এসে গেছে। 

এই ২৩ বছরের সময়ে এই প্রথম মাকে আমার পাশে চাইছি, খুব করেই চাইছি। মায়ের সঙ্গে দিন দিন সম্পর্কটা আরো গভীর হচ্ছে সেটা অনুভব করতে পারছি। আরো বেশি নিজেকে জানার মতো করে মাকে জানছি। মা যখন আমার সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলে বলতেই থাকে আমিও বলি, কিন্তু কেন তা আমরা জানি না। কথা বলতে বলতে নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথ চলে আসে, ধর্ম চলে আসে, আসে দর্শন আর রাজনীতি। এগুলো সম্পর্কে মায়ের ডিটেইল জানার আগ্রহ থাকে না। অথচ সেদিন মনোযোগ দিয়ে মা আলতাফ শাহনেওয়াজের কবিতা শুনলো, এমনকি বুঝতেও পারলো। 

হঠাৎ একদিন সমাজের ইকোনমি নিয়ে কথা বলছিলাম, চুপচাপ শুনলো, নিজের মতো কিছু বললো। অথচ এতদিন ভাবতাম, মা আমার কথা, চিন্তা, ভাষা বুঝবেনা। আজকেও মধ্যরাত অবধি মায়ের পাশে শুয়ে গল্প করতে করতে বুঝলাম- আমি আমার মায়ের কথা, মায়ের চিন্তা, মায়ের দর্শনই আমার ভাষায় বলি।