বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তিটি বটগাছের মতো ছায়া হয়ে থাকেন আমাদের মাথার ওপর। তিনি সারাজীবন যেভাবে আমাদের আগলে রাখেন, আমরা তাদের সেভাবে খেয়াল রাখতে পারি না। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে দূরে থাকা, ব্যস্ততা ইত্যাদি কারণে তাদের প্রতি যত্নশীল হয়ে ওঠা হয় না সেভাবে। একজন বয়স্ক ব্যক্তি অনেকটা শিশুর মতোই। তারা নিজের খেয়াল নিজে ঠিকভাবে রাখতে পারেন না। তখন তাদের প্রয়োজন হয় এমন কাউকে, যে তার খেয়াল রাখবে, যত্ন নেবে। রমজানে অনেক বয়স্ক ব্যক্তিই রোজা রাখতে পারেন না। বয়সজনিত নানা অসুস্থতার কারণে এমনটা হতে পারে। রোজা রাখতে পারুক কিংবা না পারুক, তার প্রতি বাড়তি যত্নশীল হোন। রোজায় বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখবেন-

খেয়াল রাখুন খাবারের প্রতি

বয়স্করা রোজা রাখতে না পারলে তাদের বাসি বা আগের দিনের বেঁচে যাওয়া খাবার খেতে দেবেন না। কষ্ট হলেও তাদের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করুন। কারণ বয়স্কদের শরীর অনেক ক্ষেত্রে নাজুক হয়ে পড়ে। ফলে বাসি খাবার তাদের পেটে সহ্য হয় না। তাদের এমন খাবার খেতে দিন, যেগুলো তাদের জন্য উপকারী। ফল, স্যুপ ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে দিন। তিন বেলার খাবারের সময় ঠিক রাখুন। তারা যেন ক্ষুধার কারণে কষ্ট না পান। দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখলে দেখা দিতে পারে গ্যাস্ট্রিকসহ আরও অনেক সমস্যা

নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়ান

বেশিরভাগ বয়স্ক ব্যক্তিরই নানারকম ওষুধ খেতে হয়। চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী তাদের ওষুধের ব্যবস্থা করুন। মনে রাখবেন, তারা সময়মতো ওষুধ খাওয়ার কথা ভুলে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে হবে আপনাকেই। কখন কোন ওষুধটি খেতে হবে সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাদের হাতের কাছে ওষুধ রাখবেন না। কারণ তারা ভুল করে একই ওষুধ একাধিকবার খেয়ে ফেলতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই কোনো ওষুধ খেতে দেবেন না। বয়স্কদের কোনো রকম চেকআপের দরকার হলে তার ব্যবস্থা করুন।

ইফতারে সঙ্গী হোক তারাও

বয়স্করা যদি রোজা না রাখেন তবে ইফতারের সময় তাদের ফেলে ইফতার করবেন না। বরং তাদেরও সঙ্গী করুন। তারা যে ধরনের খাবার খেতে পারেন সে ধরনের খাবার খেতে দিন। ইফতারে তাদের জন্য আলাদা প্লেট সাজিয়ে দিন। এতে তারা খুশি হবেন। তবে খেয়াল রাখবেন, ইফতারে ভাজা-পোড়া বা অতিরিক্ত মশলাদার খাবার তাদের খেতে দেবেন না। কারণ এসব খাবার তাদের পেটে সহ্য না-ও হতে পারে।

সময় দিন

যত ব্যস্তই থাকুন না কেন, দিনের মধ্যে কিছুটা সময় বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তির জন্য রাখুন। কারণ তারা এসময় অনেকটাই নিঃসঙ্গবোধ করেন। তাদের সঙ্গে গল্প করুন। ভালো-মন্দ জানতে চান। কীভাবে তাদের দিনটি আরও সুন্দর কাটতে পারে সে বিষয়ে কথা বলুন। তাদের জীবনের নানা মজার কিংবা কষ্টের গল্প শুনতে চান। তারা মন খুলে কথা বলতে পারলে অনেক বেশি খুশি থাকবেন। তাদের হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করুন। তাদের কোনো কিছু প্রয়োজন কি না তা জানতে চান এবং প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর ব্যবস্থা করুন। পরিবারের নানা রকম পরিকল্পনায় বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তির মতামত নিন। এতে তিনি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে শিখবেন।

এইচএন/এএ