ছবি: শুভশ্রী গাঙ্গুলির ফেসবুক থেকে

মা হওয়া জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এসময় একজন নারীর জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে। শরীর, মন, জীবনযাপন- সবকিছুই বদলে যায়। তখন নিজের পাশাপাশি আরেকজন মানুষের দায়িত্ব নিতে হয়, তার যত্নে মনোযোগী হতে হয়। অনেক নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, মা হওয়ার আগে ছিপছিপে গড়নের থাকলেও মা হওয়ার পরে তাদের ওজন অনেকটাই বেড়ে যায়।

মা হওয়ার পরে ওজন বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উঠে এসেছে তাদের জীবনযাপনের পরিবর্তনের বিষয়টি। এসময় সন্তানের জন্য রাত জাগা, যখন-তখন খাবার খাওয়া ইত্যাদি কারণে ওজন বেড়ে যায়। মোট কথা, মা আগে তার যে জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল তা থেকে সরে আসার কারণে শরীরে এই পরিবর্তন আসে।

সন্তান থাকা এবং সন্তান না থাকা অবস্থায় নারীদের ওজনের তুলনামূলক একটি জরিপ করেন মিশিগান ইউনিভার্সিটির অ্যাসসিয়েট প্রফেসর ওলগা ইয়াকুশেভা। ত্রিশ হাজার নারীর ওপর চালানো এই জরিপে দেখা যায়, বেশিরভাগ নারীই সন্তান জন্মদানের পর আর আগের অবস্থায় ফিরতে পারেন না। তবে কেউ কেউ সন্তান জন্মদানের দুই-এক বছরের মধ্যে ওজন কমাতে সক্ষম হন। অবশ্য এই সংখ্যা খুব বেশি নয়।

সন্তান জন্মদানের পরে মায়ের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মায়ের কাছে সন্তানের প্রয়োজন সবার আগে প্রাধান্য পায়। তাই মায়েরা নিজের দিকে খেয়াল রাখার সুযোগ পান না। একারণে সময়মতো খাওয়া, ঘুম, শরীরচর্চা ইত্যাদি সম্ভব হয় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। অনেক মায়েরা সন্তানের রেখে দেওয়া খাবার নষ্ট না করে খেয়ে ফেলেন। সন্তানের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বসে বা শুয়ে গল্প পড়ে শোনান তারা। এগুলোও ওজন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

অনেক মা হয়তো সন্তান হওয়ার পরপর ডায়েট মেনে চলার চেষ্টা করেন। কিন্তু সন্তান কিছুটা বড় হতেই সেই প্রচেষ্টায় ভাটা পড়ে যায় তাদের। মা হওয়ার পর তাই তাড়াহুড়ো করে ওজন কমানোর চেষ্টা করা চলবে না। বরং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। এতে ওজন কমানো সহজ হবে। জেনে নিন মা হওয়ার পর ওজন কমানোর কিছু সহজ উপায়-

খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার

শুধু পুষ্টিকর নয়, বরং মায়ের জন্য কোন খাবারটি সঠিক সেটি বেছে নিতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত শাক-সবজি, নানা ধরনের ফল, প্রোটিন, দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের পরিমাণ জেনে নিতে পারলে ভালো। এতে শরীর সঠিক পুষ্টি পাবে। সেইসঙ্গে ওজন কমানোও সহজ হবে। 

নাস্তা হোক স্বাস্থ্যকর

অনেকেই নাস্তা বলতে বোঝেন ভাজাপোড়া বা মুখরোচক কোনো খাবার। মা হওয়ার পরে এসব খাবার এড়িয়ে চলুন। যদি কিছুক্ষণ পরপর খেতে হয় তবে স্বাস্থ্যকর নাস্তা বেছে নিন। এই তালিকায় রাখুন বিভিন্ন ধরনের ফল, লবণ ছাড়া বাদাম, টক দই, সালাদ ইত্যাদি।

পানি পান করতে হবে

সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। মা হওয়ার পরেও এই অভ্যাসে পরিবর্তন করা যাবে না। পর্যাপ্ত পানি পান করলে মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ বাড়ে। সেইসঙ্গে এটি বাড়তি ক্যালোরি ঝরাতেও সাহায্য করে। শুধু পানি পান করতে ভালো না লাগলে শরবত, জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

খাবার বাদ দেবেন না

অনেকে দ্রুত ওজন কমানোর জন্য কোনো একবেলার খাবার বাদ দিয়ে দেন। এটি খুবই অস্বাস্থ্যকর। এতে ওজন তো কমেই না উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় থাকে। দেখা দিতে পারে গ্যাস্ট্রিকসহ নানা সমস্যা। তাই কোনো বেলার খাবার বাদ দেবেন না। চেষ্টা করুন প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খেতে। 

বাড়ির খাবার খান

রেস্তোরা কিংবা বাইরের খাবার খেতে যতই ভালো লাগুক, সেগুলো তেমন স্বাস্থ্যকর হয় না। তাই যেকোনো খাবার বাড়িতে তৈরি করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। বাড়িতে তৈরি খাবার অস্বাস্থ্যকর হওয়ার ভয় কম। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে বাড়ির খাবার খেতে হবে।

নজর দিন ঘুমের দিকে

মা হলেই ঘুম বাদ দিয়ে শিশুর যত্ন নিতে হবে- এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসুন। সন্তান জন্মদানের পর একজন মায়েরও প্রয়োজন পড়ে বাড়তি যত্নের। তাকে পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে শিশুকে সেই সময়ে অন্য কেউ দেখাশোনা করতে পারেন। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন অন্তত সাত-আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ঘুমে সমস্যা হলেও ওজন বৃদ্ধির ভয় থাকে।

সক্রিয় থাকুন

মা হওয়ার পর অনেকে অলসতা করে শরীরচর্চা বা শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে দেন। এতে করে ওজন কমানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই নিজেকে সক্রিয় রাখুন। হাঁটাচলা, হালকা শরীরচর্চা বজায় রাখুন। এতে করে ভালো থাকবে শরীর, কমবে মানসিক চাপ। তবে খুব ভারী কোনো শরীরচর্চা করতে যাবেন না। কারণ সন্তান হওয়ার পরে শরীরে অনেক ধরনের পরিবর্তন আসে।

এইচএন/এএ