শীত বেশ জেঁকে বসেছে। সকালে বিছানার উষ্ণতা ছাড়তে মন চায় না যেন। এই হিম হিম দিনের ফাঁক গলে একটু করে বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি। পাতা ঝরার দিন শেষ হলো বলে! আর ক’দিন পরেই বিদায় নেবে শীত। ন্যাড়া মাথার গাছগুলো তখন কচি সবুজ পাতায় ভরে উঠবে। ফুল বাগানে বসবে নানা রঙের ফুলের মেলা। দেখা মিলবে রঙিন বসন্তের। ঋতুর পরিবর্তনে শীতের পরেই আসে বসন্ত। আলস্য ভরা হিম শীতল দিন শেষে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠার সময় এই বসন্ত। শীতের সময়ে কিছু বাড়তি যত্ন নিতে হয় আমাদের। আবার হঠাৎ শীত ছেড়ে বসন্তে প্রবেশের ক্ষেত্রেও নিতে হয় কিছু যত্ন। প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে একটু খেয়াল তো রাখতেই হয়!

ত্বকের যত্ন

শীতের শেষে এসে আমাদের ত্বক আরও বেশি রুক্ষ হয়ে পড়ে যেন। এই সময়ে ত্বক সতেজ রাখতে প্রাকৃতিক নানা উপায় বেছে নেয়া যেতে পারে। ত্বক ভালো রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে মুলতানি মাটি। সামান্য মুলতানি মাটির সঙ্গে অলিভ অয়েল ও কাঁচা হলুদের পেস্ট নিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এবার এই মাস্ক ব্যবহার করুন হাত, পা ও মুখে। মিনিট বিশেক এভাবে রেখে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বক সতেজ হবে অনেকটাই। 

খেয়াল রাখতে হবে সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। কিছু সাবান আছে যেগুলো আমাদের ত্বক আরও রুক্ষ করে দেয়। তাই ক্ষারযুক্ত সাবানের বদলে ব্যবহার করুন ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান। এতে ত্বক বেশি ভালো থাকবে। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার না করাই ভালো। 

ত্বকের যত্নে সবচেয়ে ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে গ্লিসারিন। গ্লিসারিনের সঙ্গে সামান্য পানি বা গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। শীতের শেষে ত্বকে যে টান ধরে তার হাত থেকে নিষ্কৃতি দেবে গ্লিসারিন। মধু ও লেবুর রসের সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে মাস্ক হিসেবে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এতেও ত্বক সতেজ হবে।

চুলের যত্ন

পুরো শীতেই আমাদের চুল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। শীতের শেষে এসে তাই চুলের বাড়তি যত্ন নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। চুল সুস্থ ও সুন্দর রাখতে তেলের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী হলো নারিকেল তেল। তবে নারিকেল তেল ব্যবহারের আগে হালকা গরম করে নিতে পারলে ভালো। হালকা গরম তেল নিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। এতে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। আপনি যদি রাতে চুলে তেল দিয়ে ঘুমাতে যান তবে সকালে উঠে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর ব্যবহার করতে হবে কন্ডিশনার।

চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্নরকম হেয়ারপ্যাক। ডিম, মধু, লেবুর রস ও গ্লিসারিন একসঙ্গে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন। এই প্যাক মাথার ত্বক ও চুলে ভালোভাবে মেখে ঘণ্টাখানেক রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু করে নিন। চুল ভালো রাখতে হলে শ্যাম্পুর পরে অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। শীতের শেষে চুলের এই বাড়তি যত্নটুকু আপনাকে দেবে উজ্জ্বল ও ঝলমলে চুল।

পোশাকের যত্ন

শীতে যেসব পোশাক আমাদের আরাম ও উষ্ণতা দেয়, শীত শেষে সেগুলো যেন অবহেলায় পড়ে না থাকে। সেসব পোশাক ভালোভাবে পরিষ্কার করে তুলে রাখতে হবে। শাল অথবা মাফলার হলে তা ধুয়ে শুকিয়ে নেয়ার পরে উল্টো করে ভাঁজ করে রাখতে হবে। এতে রং দীর্ঘদিন উজ্জ্বল থাকে। হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখলে ভাঁজও নষ্ট হবে না।

শীতের সোয়েটার বা ব্লেজার পরিষ্কার করে তা নরম কোনো কাপড়ে মুড়িয়ে রাখুন। এতে সেসব পোশাক সুন্দর থাকবে। মোজা তুলে রাখার আগে অবশ্যই ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। নয়তো দুর্গন্ধ বের হতে সময় লাগবে না! একইভাবে যত্ন নিতে হবে লেপ-কাঁথা ও কম্বলেরও। তুলে রাখার আগে সেগুলো পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে রাখতে হবে।

ঘর পরিষ্কার

শীতের শেষে ঘরে ধুলোবালির উপস্থিতি বেড়ে যায়। ধুলো-ময়লা আমাদের শরীরের জন্যও ক্ষতিকর। নানারকম রোগের জীবাণু লুকিয়ে থাকতে পারে ধুলোবালিতে। তাই এসময়ে ঘর পরিষ্কারে আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত। সবার আগে শোবার ঘর ও রান্নাঘরের দিকে নজর দিন। কারণ এই দুটি জায়গায় জীবাণু ছড়ানোর ভয় বেশি থাকে। বিছানাপত্র দুই-তিন দিন পরপরই পরিষ্কার করুন। রান্নাঘর রাখুন ঝকঝকে। কোনোরকম এঁটো থালা-বাসন জমিয়ে রাখবেন না। ঘরের ধুলো পরিষ্কারের ক্ষেত্রে সম্ভব হলে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করুন।

বালিশ, কুশন, তোষক, জাজিম সবকিছুই সম্ভব হলে রোদে দিন। আসবাবপত্র, ঘরের আনাচে-কানাচে ধুলো থাকলে তা পরিষ্কার করুন। ভেজা সুতির কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করলে সহজেই ধুলো দূর হবে। শীতে ফ্যান চালানোর দরকার হয় না বলে ফ্যান পরিষ্কারের কথা ভুলে যান অনেকে। এদিকে ফ্যানে জমতে থাকে ধুলো-ময়লা। তাই আগেভাগেই ফ্যান পরিষ্কার করে রাখুন। দিনে একবার ঘর পরিষ্কার করলে আর সহজে ধুলো জমতে পারবে না।

এইচএন/এএ