করোনাভাইরাস নানাভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, সন্দেহ নেই। শারীরিক ও মানসিকভাবে করেছে বিপর্যস্ত। খালি চোখে দেখা যায় না অথচ এখন আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রুর নাম করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে এই মহামারির তাণ্ডবলীলা এখনও থামেনি। এই ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পড়েছে শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে। প্রায় এক বছর হতে চললো সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিশুরা হয়ে পড়েছে গৃহবন্দি। দিনের পর দিন ঘরে থাকাটা যে তাদের মানসিকতার ওপর খুব বাজেভাবে প্রভাব ফেলবে সেকথা বোঝাই যাচ্ছে! কিন্তু সময় তো থেমে থাকে না। পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আপনার সন্তানকে সেভাবেই এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করতে হবে। হঠাৎ পাওয়া এই অযাচিত অবসর যেন তাদের বিগড়ে না দেয়! পাশাপাশি পড়াশোনার গতি যেন শ্লথ না হয়ে আসে সেদিকে নজর রাখবেন।

অনলাইনে সে কী করছে?

স্কুল বন্ধ থাকাতে আপনার সন্তানকে ক্লাস করতে হচ্ছে অনলাইনে। এতে করে সে অনেকটা সময় ইন্টারনেটের সান্নিধ্যে থাকতে পারছে। এর পুরো সময়টা কি পড়াশোনায় ব্যয় করছে না-কি অন্যকিছুতে? সন্তানকে স্বাধীনতা দেয়ার পাশাপাশি শাসনেও রাখতে হবে। কারণ তাদের বয়স অল্প হওয়াতে নিজেদের ভালো-মন্দ বোঝার মতো জ্ঞান থাকে না সব সময়। তবে আপনার সেই শাসন যেন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখবেন। দীর্ঘ সময় ইন্টারনেটে কাটালে সহজেই এমনকিছু বিষয়ের প্রতি আসক্তি চলে আসতে পারে যা আসলে তার জন্য ক্ষতিকর। তাকে বোঝাতে হবে, সামনে তার দীর্ঘ জীবন পড়ে রয়েছে। ভবিষ্যতকে সুন্দর করতে হলে অবশ্যই কিছু নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে।

পড়াশোনার গতি

স্কুল বন্ধ তো কী হয়েছে! আপনার সন্তানের পড়াশোনা যেন বন্ধ না থাকে। এতে করে স্কুল খুললেও সে অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়বে না। তার পড়াশোনার গতি ঠিক থাকবে। প্রতিদিন কতটুকু কী পড়তে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করতে তাকে সাহায্য করুন। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন তৈরি করতে উৎসাহ দিন। মহামারির এই সময়ে কারও মানসিকতাই খুব একটা ভালো নেই। তাই আপনার সন্তানকে বকাঝকা না করে ধৈর্য ধরে বুঝিয়ে বলুন। যেকোনো মানুষই তিরষ্কারের চেয়ে পুরস্কার পেতে বেশি পছন্দ করে। ধরুন, আপনি তাকে বললেন, প্রতিদিনের পড়া নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারলে তার প্রিয় কোনো খাবার রেঁধে খাওয়াবেন বা খেলার সময় আরও বিশ মিনিট বাড়িয়ে দেবেন।

সৃজনশীল কাজ

শুধু পড়াশোনার মধ্যে রাখলে শিশু অল্পদিনেই বিরক্ত হয়ে উঠবে। তাই তার সময়গুলো আনন্দময় করে রাখার ব্যবস্থা করুন। পড়াশোনার বাইরে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের সঙ্গে তাকে যুক্ত করুন। সবার আগে খেয়াল করুন, কোন কাজগুলোতে সে বেশি আগ্রহী। যদি সে ছবি আঁকতে পছন্দ করে তবে রং-তুলি ও ছবি আঁকার জন্য কিছুটা সময়ের ব্যবস্থা করে দিন। যদি সে গান গাইতে পছন্দ করে তবে তাতে আরও উন্নতি করার ব্যবস্থা করে দিন। শিশু যদি বই পড়তে ভালোবাসে তবে তার উপযোগী ভালো ভালো বই কিনে দিন। তবে আপনার ভালোলাগা বা শখের কাজগুলো তার ওপর জোর করে চাপাতে যাবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষই আলাদা। তাই প্রত্যেকের পছন্দও আলাদা হওয়া স্বাভাবিক। আপনার সন্তান বলেই যে সবকিছু আপনার মতো হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ

সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করতে হলে তাকে পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দিতে হবে। যদি বাড়িতে নানা ঝামেলা লেগে থাকে, মা-বাবার ভেতরে ঝগড়া-ঝাটি বা দ্বন্দ্ব লেগে থাকে তাহলে তার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়বেই। এর ফলস্বরূপ সে স্বাভাবিকভাবেই পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবে না। তাই সন্তানের জন্য হলেও নিজের ভেতর বোঝাপড়াটা ভালো রাখুন। কারণ আপনাদের দেখেই সে শিখবে। পাশাপাশি শিশুর পড়ার জায়গাটি আকর্ষণীয় রাখার চেষ্টা করুন। যদি সম্ভব হয় তবে তার পড়ার জন্য আলাদা একটি ক্ক্ষ রাখুন। আর না হলেও সমস্যা নেই। বাড়ির একটি কর্নারে তার পড়ার টেবিল পেতে দিন। কোন জিনিসটা কোথায় রাখলে বেশি সুন্দর লাগবে এবং খুঁজে পেতে সহজ হবে তা তাকে বলে দিন। চেষ্টা করুন তার পড়ার টেবিলের চারপাশের সবকিছু রঙিন রাখতে। রঙিন যেকোনো কিছুর প্রতি শিশুদের আকর্ষণ বেশি থাকে।

পড়াশোনা হোক আনন্দময়

পড়াশোনা মানেই যে ঘাড় গুঁজে বই পড়া এমনটা কিন্তু নয়। বরং পড়াশোনায় বৈচিত্র থাকলে শিশুর পড়া মনে রাখা অনেক সহজ হবে। যেকোনো বিষয় বোঝানোর জন্য তাকে বাস্তব কোনো উদাহারণ দিতে পারেন। আবার খেলতে খেলতে পড়া বা অংক শেখার বিষয়টিও বেশ কার্যকরী। এতে শিশু নিজে থেকেই পড়ার প্রতি উৎসাহ পাবে। এমন আচরণ করবেন না যাতে সে পড়াশোনা বা পাঠ্যবইকে শত্রু ভাবতে শুরু করে। সে তার পড়াশোনা নিয়ে কী ভাবছে তা জানতে চান। এতে তার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারবেন। এভাবে আলোচনা করলে শিশুও নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে শিখবে।

এইচএন/এএ