চারদিকে শীতের আমেজ। বিকেল হতে না হতেই টুপ করে সন্ধ্যা নেমে যায়। এরপর শহরের মোড়ে মোড়ে বসে পিঠার দোকান। ধোঁয়া ওঠা ভাপা কিংবা চিতই খেতে খেতে সন্ধ্যাটাও জমে যায় বেশ। নানা কারণেই শীত অনেকের কাছে প্রিয় ঋতু। বছরের শেষ সময় বলে এসময় বেড়াতেও যান অনেকে। সবুজ ঘাসে শিশিরের জমে থাকা দেখে কে না মুগ্ধ হয়!

শীতের নানা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলেও এসময় নিজের প্রতি খেয়াল রাখার কথা ভুলে যান অনেকে। শীতের সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করেন এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। এসময় তেমন একটা তৃষ্ণা লাগে না বলে পানি পানের কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পান না করার কারণে আমাদের শরীরে তৈরি হতে থাকে পানিশূন্যতা।

শীতে পানি পান করা কমিয়ে দেওয়া মোটেই ভালো অভ্যাস নয়। গরমের দিনে যতটা পানি পান করতেন, শীতে পানি পানের পরিমাণ বলতে গেলে তার অর্ধেকে নেমে আসে। তখন আমাদের শরীরে তার নেতিবাচক প্রভাব তো পড়বেই। 

যে কারণে পানি প্রয়োজন

আমাদের শরীরের বেশিরভাগ অংশই পানি। শরীরের যাবতীয় কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় পানির। পানি শরীরে ওজন ধরে রাখে, রক্ত ও লালা তৈরি করে, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে, ত্বক ভালো রাখে। এছাড়াও করে আরও নানা উপকার। আর এ কারণেই প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পানি পান করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের সব ধরনের বিপাক বা মেটাবলিজমে পানি প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে এই মেটাবলিজম ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমাদের অঙ্গগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। শীতে পানি কম খেলে হতে পারে এই সমস্যাগুলো-

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হতে পারে

পানি কম পান করলে সবার প্রথমে দেখা দেয় এই সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, তা শীত হোক কিংবা গরমে। এরপরও যদি কোনোভাবে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হয়, তাহলে পানি পানের মাত্রা বাড়াতে হবে।

দুর্বলতা দেখা দিতে পারে

পানি আমাদের ভেতর থেকে সতেজ রাখতে কাজ করে। আপনি যদি পানি কম পান করেন তবে শরীর নিস্তেজ হতে শুরু করবে। পানির অভাবে শরীরের ভেতরের নানা প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। যে কারণে শরীরে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখার জন্য অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানিও পান করতে হবে। আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে পানি কম পান করতে থাকেন তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হতে থাকবে। যে কারণে রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। আপনি সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে

পর্যাপ্ত পানি না পেলে হজমপ্রক্রিয়াও ব্যহত হয়। এদিকে শুষ্ক মলের কারণে দেখা দিতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। সেখান থেকে পাইলসের সমস্যা শুরু হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। বুঝতেই পারছেন, সব সমস্যার মূলে রয়েছে এই পানি কম পান করার অভ্যাস। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে

আপনার ত্বক মলিন ও প্রাণহীন? এজন্য আপনার পানি কম পান করার অভ্যাস দায়ী হতে পারে। শীতের সময়ে এমনিতেই আমাদের ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়, এর সঙ্গে পানির অভাব যোগ হলে আপনার ত্বকের সৌন্দর্য একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে পানি কম পান করার কারণে প্রস্রাবের পরিমাণও কমে যায়। ফলে শরীর থেকে দূষিত পদার্থগুলো বের হতে পারে না। যার প্রভাব শরীরের পাশাপাশি পড়ে ত্বকেও। তাই শীতের সময়ে পানি পানে অলসতা করবেন না। প্রতিদিন অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করুন।