ছবি : সংগৃহীত

রাফসান চৌধুরীর সঙ্গে ইদানীং দেখা প্রায় হয় না বললেই চলে। আগেও যে খুব হতো এমনটা নয়। তাহলে কেন বললাম—ইদানীং প্রায় দেখা হয় না বললেই চলে! আসলে ব্যাপারটা হলো—তিনি ছিলেন আমার স্ত্রীর সহকর্মী। সেই সুবাদে প্রতিদিন স্ত্রীর কাছে তার গল্প শুনতাম। তিনি কেমন ছেলেমানুষের মতো আচরণ করেন। কেমন সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। এমন সব নানা খুঁটিনাটি প্রতিদিন চায়ের টেবিলে বসে বলতো ইশিকা।

স্ত্রী কন্যা থাকে দেশের বাইরে। আর তিনি পৃথিবীর নানা দেশে বর্ণিল এবং বৈচিত্র্যময় জীবন কাটিয়ে অবশেষে ঢাকায় এসে থিতু হয়েছেন। আর ঢাকায় এসে থিতু হয়েছেন বলেই আমার স্ত্রীর কলিগ হতে পেরেছেন। অথবা আমার স্ত্রী তার কলিগ হতে পেরেছেন। আমার নিজেরও পেশাগত কাজে মাঝে মাঝে তার সঙ্গে দেখা হতো এবং আমার পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে, বিশেষ করে আমার অফিসের বসদের কারো সঙ্গে দেখা হলে তিনি মনে করিয়ে দিতেন—আপনাদের অফিসের পাভেলের স্ত্রী ইশিকা আমার কলিগ! এতে করে অফিসে আমার কদর বাড়ত না কমতো ঠিক জানি না, তবে আমি ভেতরে ভেতরে এক ধরনের আত্মপ্রসাদ পেতাম।

তো, নানা কারণেই রাফসান চৌধুরীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ কমে গেল এক সময়। এই কমে যাওয়ার প্রধানতম কারণ হলো আমার স্ত্রী এখন অন্য জায়গায় কাজ নিয়েছেন। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই রাফসান চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদিন তার দেখা হয় না। তার গল্পও প্রতিদিন হয় না বাসায়। তো, ফেসবুকে তাকে ফলো করি নিয়মিত।

আরও পড়ুন : নতুন আলোয় জেগে উঠুক শিশুসাহিত্য

স্ত্রী সন্তানহীন একাকী সংসারে কী কী রান্না করেন, কীভাবে রান্না করেন ইত্যাদি ছবি তিনি নিয়ম করেই দেন ফেসবুকে। দেখি আর বিরক্ত হই কিছুটা। আরে ভাই আপনি যতই পণ্ডিত লোক না হোন না কেন—রান্নার ছবি এমনকি ফুটো হয়ে যাওয়া স্যান্ডো গেঞ্জি বারান্দার তারে মেলে দেওয়ার পর বাতাসে উড়ে গেল, নাকি ঝড় বৃষ্টির তোড়ে নিচে পড়ে গেল, নাকি কেউ চুরি করে নিয়ে গেল—তা নিয়ে ফেসবুকে এত আদিখ্যেতার কী আছে?

যাই হোক, আমার কথা মতো তো আর তিনি ফেসবুক চালাবেন না! কিংবা ছেঁড়া গেঞ্জি অথবা পোড়া রুটির ছবি দেওয়া বন্ধ করবেন না। আমি বরং চাইলে ফেসবুকে তাকে আনফ্রেন্ড করে দিতে পারি। ব্লক করে দিতে পারি। এমনকি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। কিন্তু সেটা যেহেতু করতে পারছি না বা করছি না, সুতরাং তার এসব অত্যাচার সহ্য করে যেতেই থাকি।

তবে হ্যাঁ, ক্রিকেট খেলা নিয়েও এই লোক ফেসবুকে ব্যাপক মাতামাতি করেন। পৃথিবীর যে প্রান্তেই ক্রিকেট খেলা হোক—সেটি হোক আন্তর্জাতিক ম্যাচ কিংবা বিপিএল, আইপিএল, সিপিএল, বিগ ব্যাশ—তিনি নিয়মিত খেলা দেখেন এবং ফেসবুকে তা জানানও দেন। এটা নিয়ে অবশ্য আমার কোনো বিরক্তি লাগে না। বরং কিছুটা মজাই লাগে। কারণ ব্যস্ততার কারণে কোনো খেলা দেখতে না পারলেও রাফসান চৌধুরীর ফেসবুক থেকে আপডেট পাই।

তো, আজ দুপুরে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল রাফসান চৌধুরীর সঙ্গে। একটা কাজে গিয়েছিলাম নিকেতন এলাকায়। কাজ সেরে বের হয়েছি। রিকশা খুঁজছি এদিক সেদিক। কোনো রিকশাই কারওয়ান বাজারের দিকে যেতে চাইছে না।

অবশ্য এই শহরের বেশিরভাগ সড়কই রিকশা চলাচলের জন্য অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে নিকেতন থেকে কারওয়ান বাজার যেতে হলে নানা চিপা গলি, তস্য গলি ঘুরে তারপর রিকশাচালককে যেতে হয়। যার কারণে তাদের মেজাজ মর্জির ওপর নির্ভর করে যাওয়া না যাওয়া।

এছাড়া নিকেতনের আশপাশের অলিতে গলিতে ছোট ছোট দূরত্বের খ্যাপ মারলে যে টাকা ভাড়া পাওয়া যাবে, এক ঘণ্টা সোয়া ঘণ্টা সময় জ্যামের রাস্তায় কাটিয়ে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত গেলে ভাড়া একটু বেশিই পাবেন হয়তো, কিন্তু ঠিকঠাক হিসাব করলে তাতে ঠিক পোষায় না। ফলে রিকশা চালকেরা কেউ সহজে কারওয়ান বাজারের দিকে যেতে চান না।

সেদিনও নিকেতনের রাস্তায় তালু পোড়া রোদ মাথায় দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছিলাম—আর একটার পর রিকশা সামনে দিয়ে গেলেও কেউ কারওয়ান বাজার যেতে রাজি না হওয়ায় মেজাজ ক্রমেই চড়ছিল। ভাবছি উবার কিংবা সিএনজি ডাকব। এদিকে আবার একের পর এক মোটরসাইকেল চালক নরম সুরে জিজ্ঞেস করছিল—ভাই কোথায় যাবেন? বাইক লাগবে? যেন নিষিদ্ধ কোনো কাজের জন্য ডাকছেন—একজনের গলাটা ছিল এমনই নিচু খাঁদের এবং রহস্যে ভরা।

আরও পড়ুন : অস্থির সময়ে রবীন্দ্রনাথ কেন এত প্রাসঙ্গিক?

—আরে ভাই এমন করছেন কেন? এক বাইক চালককে কিছুটা ধমকের সুরে বলি আমি।

বিনিময়ে পাশের বাইকারের সঙ্গে নিচু গলায় কী যেন বলেন তিনি। তবে কথা স্পষ্ট শুনতে না পেলেও সেটি যে আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলছেন এবং খুব অপমানসূচক কথা বলছেন সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার। খুব কঠিন করে একটা ঝাড়ি দিতে ইচ্ছে করলেও বহু কষ্টে দমন করি নিজেকে।

দরদর করে ঘাম ঝরছে শরীর থেকে। পানির পিপাসা পাচ্ছে খুব। একটু ছায়া খুঁজি চড়া রোদ থেকে বাঁচার আশায়। এমন সময় তার দেখা মেলে। হেলেদুলে হেঁটে আসছেন ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা রাফসান চৌধুরী। ঘামে ভেজা মুখ। গায়ে একটা রঙ চটা শার্ট। গ্যাবার্ডিনের যে প্যান্টটা পরে আছেন সেটাকে দেখে ধূসর রঙের মনে হয়।

আদতে কী রঙ ছিল দেখে আর বোঝার উপায় নেই। অথচ এই লোকটা মাসে ভালোই টাকা কামান। ভালোই মানে কি—আমরা যারা মধ্যবিত্তের জীবনযাপন করি তাদের তুলনায় তার মাসিক আয় অনেক ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো, গবেষণা করা এবং সৃজনশীল লেখালেখি থেকেও অনেক টাকা আয় করেন তিনি।

তারপরেও এই রঙ জ্বলা শার্ট প্যান্ট পরবেন এবং শহরের বড় বড় জায়গায় এই পোশাকে হাজির হয়ে সবাইকে বিব্রত করবেন, চমকে দেবেন এবং নিজে থাকবেন খুব নির্বিকার!

একবার তো ছেঁড়া প্যান্ট রিপু করার জন্য নানান জায়গা ঘুরে বনানীর কাছের গোডাউন বস্তি এলাকার এক দর্জি দোকানে হাজির হয়েছিলেন। বয়সের ভারে একেবারে মিইয়ে প্যান্টটা কোনো মতেই ঠিক করতে না পেরে দোকানি বিনয়ের সঙ্গে ফেরত দিয়েছিলেন তাকে। তো আজকের এই দুপুরে রাফসান চৌধুরীকে দেখে একবার মনে হয় কাছে গিয়ে কথা বলি, আরেকবার মনে হয় সটকে পড়ি। এই দুপুর রোদে অকারণ কথা বাড়িয়ে লাভ কী? আমার দোনোমনা চলার মাঝেই মোটা কাচের চশমার পেছন থেকে চোখ পিটপিট করে তাকান আমার দিকে। এবং চিনে ফেলেন।

আরও পড়ুন : পঞ্চাশ বছরের সাহিত্যে ভাবনার পরিবর্তন

—তুমি পাভেল না?

—জ্বি স্যার, কেমন আছেন?

—এখানে কী করো?

—কিছু না স্যার, একটা কাজে এসেছিলাম। কাজ শেষ। এখন ফিরে যাব। রিকশা খুঁজছি।

—ওহ আচ্ছা।

আর কিছু না বলে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। কিন্তু আমার কেন জানি তার সঙ্গে অনেকটা সময় গল্প করতে ইচ্ছে করে। কেন এমন মনে হয় জানি না। পেছন থেকে তাকে ডেকে উঠি আমি।

—স্যার স্যার….

—বলো, কী হলো?

দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি।

—আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করতে ইচ্ছে করছে।

—চলো। কোথায় বসবে?

—আপনি বলেন স্যার!

—আমার বাসায় চলো।

হাঁটতে থাকি আমরা দুজন। অল্প একটু হাঁটলেই তার বাসা। দুই কামরার ছোট ফ্ল্যাট। একটা ছোট রান্নাঘর। দক্ষিণমুখী একটা বারান্দায় যত্নে, তবে এলোমেলোভাবে বেড়ে ওঠা কিছু গাছ। বাইরের রুমটাতে বসি আমি। তিনি চা বানাতে রান্নাঘরে চলে যান। এখান থেকে বসেও দেখা যায় রান্নাঘরের প্রায় পুরোটা।

খুব গোছানো এবং পরিপাটি রান্নাঘর। তিনি যেসব পোড়া রুটি কিংবা পোড়া মাংসের তরকারির ছবি দেন ফেসবুকে—সেসবের সঙ্গে এই গোছানো রান্নাঘরের চিত্র কিছুতেই মেলে না। বসে বসে তার ঘরের সাজসজ্জা দেখতে থাকি। কাঠের সোফায় কোনো এক কালে বার্নিশ করানো হয়েছিল।

এখনো সেই চকমকে জৌলুশের খুব ম্রিয়মাণ সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এই বসার আসনগুলো। তবে দুয়েক জায়গায় এলোমেলোভাবে ছেঁড়া। ভেতরের ফোম বের হয়ে আছে। সোফার পাশের ছোট্ট টেবিলে একগুচ্ছ তাজা গন্ধরাজ ফুল। তবে ফুলদানিটা খুবই সস্তা দামের। আমার কাছে খুব অবাক লাগে এই ঢাকা শহরে এমন তাজা গন্ধরাজ তিনি জোগাড় করলেন কীভাবে।

আরও পড়ুন : সাহিত্যে ভাষা আন্দোলন এবং বাস্তবের ফাঁক-ফাঁকি

তিনি যে এলাকায় থাকেন সেখানে দেশি বিদেশি নানা রকম দামি দামি ফুলের বর্ণিল দোকান আছে। কিন্তু গন্ধরাজ ফুলের মতো কিছুটা জংলি এবং গেঁয়ো ফুল তিনি জোগাড় করলেন কীভাবে? তবে খুব বেশি অবাক হই না। কারণ তার মতো লোকের পক্ষে এইটা খুব অস্বাভাবিক বিষয় না।

যারা তার পড়াশোনা এবং গবেষণার ফিরিস্তি মন দিয়ে শুনলেন এতক্ষণ, তারা হয়তো ধারণা করছেন বাড়ি ভর্তি বইয়ের স্তূপের মধ্যে বসবাস করেন তিনি। এই ভাবনাটা অবশ্য খুব স্বাভাবিক। তবে এখানে বলে রাখি—রাফসান চৌধুরীর পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করলেও দুয়েকটা বই পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। এক্ষেত্রে রাফসান চৌধুরীর বক্তব্য হলো—তার গবেষণা বই কিংবা জার্নাল নির্ভর না। তিনি কোনো অ্যাকাডেমিক গবেষণা করেন না। তিনি চর্চা করেন জনমানুষের ইতিহাস। রাফসান চৌধুরীর ভাষায়—‘গণমানুষ আমার বই। গ্রামের মানুষ আমার লাইব্রেরি!’ সুতরাং ঘর জুড়ে বইয়ের স্তূপ জমানোর কোনো দরকার পড়ে না তার।

একা একা বসে থেকে খুব বিষণ্ন লাগছে। এই গরমের দুপুরে ঝোঁকের মাথায় কেন এই বৃদ্ধের সঙ্গে তার বাসায় এলাম—তা নিয়ে নিজের ওপর খুব রাগ লাগছে এখন। কিন্তু কী আর করা! এসে যেহেতু পড়েছি সুতরাং বসে থাকতেই হয়। এমন একজন মানুষের মুখের ওপর তো আর গটগট করে চলে যাওয়া যায় না! ওদিকে তিনি চা বানাচ্ছেন তো বানাচ্ছেনই। পোড়া রুটি, পোড়া মাংসের তরকারির মতো তিনি এখন পোড়া চা বানাচ্ছেন নাকি?

বসে বসে থাকতে থাকতে হয়রান হয়ে পর্দা বিহীন দরজা দিয়ে তার শোয়ার ঘরের বিছানায় একতোড়া কাগজ পড়ে থাকতে দেখি।

—স্যার, আমি একটু বাসাটা হেঁটে দেখি?

—দেখো! কী আর আছে দেখার!

আসলে আমার উদ্দেশ্য বিছানায় পড়ে থাকা কাগজের তোড়া। একটু ইতস্তত করে কাগজটা তুলে নিই হাতে। ধারণা করি হয়তো কোনো কঠিন গবেষণার স্ক্রিপ্ট কিংবা খসড়া হতে পারে। হাতে নিয়ে পাতা উল্টাই। নেড়েচেড়ে দেখি। রাফসান চৌধুরী লিখছেন—

মাঝে মাঝে স্মৃতি কথা লিখি। লিখতে ইচ্ছা করে। যদিও জানি লিখে কোনো লাভ নেই। কে পড়বে এসব। মানুষের এখন সময় কই! তবুও লিখতে ইচ্ছা করে বলেই লিখি। যে যতটা ছিল ততটাই লেখার চেষ্টা করি। ভাবনাগুলো লিখি একই সঙ্গে ভয় এবং সাহস নিয়ে। রক্ত মাংসের কত মানুষ। কত কত তাদের স্মৃতি। সব কথা তো আর মহৎ নয়। সব মানুষও মহান নয়। সব মানুষ বীর নয়।

আরও পড়ুন : রবীন্দ্র ভাবনায় তারুণ্য 

তবে সব মানুষেরই ইতিহাস আছে। স্মৃতি আছে। তবে যে দেশে আইন করে বীর লেখা হয়—সেই দেশ আমি চিনি না। সেই দেশের জন্য কি জীবন বাজি রেখেছিলাম? তালিকাভুক্ত না হলে কেউ কি বীর না? হতে পারে না? তাহলে এই দেশে এত বীর পয়দা হলো কীভাবে? সবাই ছিল ভীতু।

বলা হতো ভীতু বাঙালি। তাহলে একাত্তরে কোত্থেকে এসেছিল এত এত বীর? এখন কেন আবার নাম লেখাতে হবে, কেন তালিকাভুক্ত হতে হবে বীরের খাতায়? এ কেমন বীরত্ব? বললেই হয় তালিকাভুক্ত ছাড়া বাকি সবাই কাপুরুষ।

১৪ আগস্ট সিদ্ধান্ত হলো ইয়াহিয়া খানের ভাষণের সঙ্গে সঙ্গে বর্ডারে আক্রমণ করা হবে। ব্যাকিং দেবে ভারতীয় গোলন্দাজরা। সময় অনুযায়ী আক্রমণ শুরু হলো। কিন্তু পাকিস্তানিরা ছিল প্রস্তুত। যেভাবে পাল্টা আঘাত আনলো সেটা ভাবনায় ছিল না। আর এই সময় ভারতীয়রা শেলিং শুরু করল।

মাঝখানে চিপায় পড়ে বেশকিছু যোদ্ধা আহত নিহত হলো। পালায় পালায় অবস্থা চারদিকে।

দুই ছেলে আশ্রয় নিল এক গোয়ালঘরে। শেল পড়ছে একের পর এক। তীব্র আওয়াজ চারপাশে। দুইজনের একজন খুব ভীত।

—দোস্ত, আমার এই তাবিজটা রাখ। মা দিসে। কইসে বিপদে আপদে কামে আইবো!

কথা শেষ হওয়ার আগেই শেল পড়ল। গরু, গোয়ালঘর, মুক্তিযোদ্ধা—সবশেষ! অন্যজন দৌড়াতে থাকে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। নতুন লড়াইয়ের প্রস্তুতির খোঁজে। কোনো দিকে তাকায় না সে। দৌড়াতেই থাকে।

ওই তাবিজটা কি তার জীবন বাঁচিয়েছিল। ছেলেটা কেন তাবিজটা তাকে দিয়েছিল!

—পাভেল তোমার চা!

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি দুকাপ চা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন রাফসান চৌধুরী।

পুনশ্চ: সেদিনের পর রাফসান চৌধুরী হঠাৎ মেসেঞ্জারে নক দেন। অনেক কথা হয় আমাদের। কিছু বিষয়ে আমার সঙ্গে দ্বিমত করেন তিনি। তার অনেক টাকা আছে, আমার এই ধারণার সঙ্গে দ্বিমত করেন তিনি। প্রশ্ন রাখেন—ভালো করে বোঝার চেষ্টা করো কে ভীতু আর কে বীর? যে ঘটনার কথা তুমি পড়েছো সেটি ছিল কসবা এলাকার। একাত্তরে এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এই দেশের মানুষ এবং মাটি।

অনেক কথার পর তিনি বলেন—যাই, এবার রুটি পোড়ানোর সময় হয়ে গেছে! একটা হাসির ইমোজি দিয়ে লেখেন—ভালো থেকো!

আমিও একটা হাসির ইমোজি দিই। আর মনে মনে বলি—আপনাকে অনেক ভালোবাসি স্যার।

খান মুহাম্মদ রুমেল