প্রকাশিত হয়েছে কবি, প্রাবন্ধিক ও কথাশিল্পী সাইফ সিরাজের কবিতার বই 'রুবাইয়্যাত-ই-মাশরিক'। বইটি প্রকাশ হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪-এ। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৪৫০।

সাইফ সিরাজের 'রুবাইয়্যাত-ই-মাশরিক' সম্পর্কে তরুণ কবি ও প্রাবন্ধিক নাজমুস সাকিব বলেছেন, সাইফ সিরাজ তার প্রবন্ধে তুলে ধরেন সমাজের অসঙ্গতি। তার কবিতায় আঁকেন জীবনের চিত্র। বহির্মুখি সামাজিক অঙ্গীকার তাকে লেখার প্রেরণা জোগায়। আত্মজৈবনিকতা, নৈরাশ্য, বিমানবিকীকরণ, বিনষ্টি—তিরিশি আধুনিকতার এই নিয়ামকগুলো তার কবিতায় ছায়াপাত করতে পারেনি। তিনি শুরু থেকেই সমাজলগ্ন, জীবনবাদি। কলাকৈবল্যবাদী কবিগণ জনজীবনবিচ্ছিন্নতা ও রাজনীতিবিমুখতাকে কবিতার শুদ্ধি মনে করেন এবং নান্দনিকতাকেই মনে করেন কবিতার একমাত্র শিল্প-সৌন্দর্য। কবি সাইফ সিরাজের কাব্যপ্রয়াসে এমন প্রবণতা কখনোই দেখা যায়নি। তিনি বরং তার কবিতার যাত্রাই শুরু করেন 'দেশ আমার বাংলাদেশ' নামে কবিতা লিখে। 

একজন কবিকে মূল্যায়ন করা যায় তার মানসলোক এবং তার কবিতার নির্মাণকলা বিশ্লেষণ করে। সাইফ সিরাজের মানসলোক গঠনে ইসলামি কাব্যের বিশাল ঐতিহ্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। পথিক হয়ে এই পথে নেমে তিনি নিজেকে হারিয়েছেন। দেখেছেন এই কাব্য-ঐতিহ্য জারিত হয়ে কেবল তার অস্তিত্ব নির্মাণ করছে। যেমন তিনি তার সদ্য প্রকাশিত 'রুবাইয়্যাত-ই-মাশরিক' এর ৭১ নম্বার রুবাইয়্যাতে বলেন:

পথিক হয়ে নেমেছি পথে ছুটতে অজানায় 
হঠাৎ আমি পথ হয়েছি দেখছি না আমায় 
এখন শুধু আমিই আছি নেই তো অনুভব- 
তবু আছি আশায় বাঁচি পথেরই সে মায়ায়।

সাইফ সিরাজের মানসলোক গঠনের প্রক্রিয়াটা ভালো বুঝা যায় 'রুবাইয়্যাত-ই-মাশরিক' এর ৬৯ নম্বর রুবাইয়্যাতে। যেখানে তিনি তার নিকটতম বাংলা কবিতার সমৃদ্ধ জগতের বদলে পারস্যের কবি ওমর খৈয়ামের কাছে হাত পাতছেন এবং ওমর খৈয়ামের মাঝে দেখছেন নিজের প্রতিচ্ছবি। 
 
ওমর খৈয়াম আঁকে আমায় আমিও তারে আঁকি 
ঘোর অঘোরেই এই দু'জনের চলছে ডাকাডাকি 
খৈয়াম কহেন আমিই সেরা আর বাকি সব দুইয়ে 
আর আমি কই আপনি ঠিকই; দুইয়েই আমি থাকি। 

তিনি বলেন, কবি সাইফ সিরাজের কাব্যরচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার নির্মাণকলা। তার কবিতা পড়তে গেলে সুধীন্দ্রনাথের কবিতার বিষয়ে বুদ্ধদেব বসুর বলা কথাটা বারবার মনে পড়ে, 'সুধীন্দ্রনাথ কুশলী নির্মাতা, তাঁর কবিতা ঘন ও সাকার, ইংরেজিতে যাকে বলে সলিড।' সাইফ সিরাজের কবিতাও তেমনি। বুননে সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ। ভাবনাগুলো তসবিদানার মতো। চিত্রনির্মাণে সরলরৈখিক। আধুনিক কাব্যধারার বহুমাত্রিক চিত্রকল্পের অভিসারী তিনি নন। ছন্দে যে দোলা তিনি সৃষ্টি করেন তা স্রোতঃস্বিনীর মতো সরল প্রবহমান নয়। বরং গভীর জলাশয় ঢেউ যেভাবে তার বুকে গোপনে চালিত করে, সাইফ সিরাজের কাব্যে ছন্দও সেভাবে  চালিত হয়। ছন্দের ক্ষেত্রে তিনি হাতুড়িপেটা নির্মাতা। ছেনে ছেনে কবিতার শরীর নির্মাণ করেন। আর যা-ই হোক, অন্তত কবিতার আঙ্গিক নিয়ে তার এই নিরীক্ষাধর্মী প্রচেষ্টার জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবেন। 

'রুবাইয়্যাত-ই-মাশরিক'-এর গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এর অলংকরণ। প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে লেখা, পৃষ্ঠাগুলোর ডিজাইন এবং অঙ্গসজ্জা—সবকিছুই কবির নিজের হাতে করা। ইলেকট্রিক এই সময়ে যা আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে। বইটি কবিতাপ্রেমি সকলের হাতে-হাতে পৌঁছে যাবে বলে প্রত্যাশা।

এক নজরে রুবাইয়্যাত-ই-মাশরিক

বই : রুবাইয়্যাত-ই-মাশরিক

লেখক : সাইফ সিরাজ

প্রচ্ছদ : সাইফ সিরাজ

প্রকাশনী : উপকথা

পৃষ্ঠা : ১২৮