একই দিনে না ফেরার দেশে লেখক আতাউর রহমান, শেখ আবদুল হাকিম এবং বুলবুল চৌধুরী

একদিনে তিনজন লেখক হারাল বাংলাদেশ। শনিবার (২৮ আগস্ট) সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাংলা সাহিত্যাঙ্গনকে শোকের চাদরে মুড়িয়ে একে একে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন তিন লেখক। তারা হলেন- রম্যলেখক আতাউর রহমান, রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখক ও অনুবাদক শেখ আবদুল হাকিম এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী। 

আজ শনিবার এই তিন লেখকের পরিবার সূত্রে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।  

রম্যলেখক আতাউর রহমান

শনিবার সকাল ছয়টায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রম্যলেখক আতাউর রহমান। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

আতাউর রহমান বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। 

১৯৪২ সালে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আতাউর রহমান। ২০০২ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এরপর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। আমলা, লেখক, শিক্ষক, কূটনীতিক ও অসাধারণ বক্তা  ছিলেন তিনি। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৪।

শনিবার বাদ মাগরিব গ্রামের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে নিজ গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়। 

লেখক শেখ আবদুল হাকিম

শনিবার বেলা একটায় রাজধানীর মাদারটেকের নান্দিপাড়ায় বড় মেয়ের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাসের লেখক ও অনুবাদক শেখ আবদুল হাকিম।  

তিনি দীর্ঘদিন থেকেই শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। সম্প্রতি রোগের তীব্রতা বেড়ে গিয়েছিল। গত মাসে চিকিৎসার জন্য তিনি বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। মাসখানেক সেখানে চিকিৎসার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। বাড়িতে আনার পর গত দু–এক দিন তার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। আজ দুপুরে হঠাৎ অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

শেখ আবদুল হাকিম ১৯৪৬ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। গত শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি তিনি সেবা প্রকাশনীর সঙ্গে যুক্ত হন। জনপ্রিয় রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস সিরিজ ‘কুয়াশা’ ও ‘মাসুদ রানার’ অনেক বইয়ের নেপথ্য লেখক ছিলেন তিনি। 

তার অনুবাদে মারিও পুজোর বিখ্যাত উপন্যাস গডফাদার বাংলা ভাষায় বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এছাড়া নিজ নামে লেখা উপন্যাস ও অনুবাদ সাহিত্যের জন্য তিনি বিপুল  জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বিপুল। 

আজ বাদ মাগরিব নন্দিপাড়া মসজিদে জানাজা শেষে নন্দিপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 

কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী

শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুরান ঢাকার বাংলাবাজারে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী। 

তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ছয় মাস আগে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সারওয়ার আলমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। তার ক্যান্সার শ্বাসযন্ত্রে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে কেমো থেরাপি নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা না থাকায় বাসায়ই তার চিকিৎসা চলছিল।

মৃত্যুকালে বুলবুল চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন পুত্র সন্তান রেখে গেছেন।

১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট তিনি গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। লেখালেখির বাইরে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কাজ করেছেন দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায়।

‘অপরূপ বিল ঝিল নদী’, ‘কহকামিনী’, ‘তিয়াসের লেখন’, ‘অচিনে আঁচড়ি’, ‘মরম বাখানি’, ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’, ‘ইতু বৌদির ঘর’ ও ‘দখিনা বাও’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ‘জীবনের আঁকিবুঁকি’ ও ‘অতলের কথকতা’ তার আত্মজৈবনিক দুই গ্রন্থ। ‘গাঁওগেরামের গল্পগাথা’, ‘নেজাম ডাকাতের পালা’, ‘ভালো ভূত’ আর ‘প্রাচীন গীতিকার গল্প’ নামক কিশোর গ্রন্থের রচয়িতাও তিনি। 

সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য বর্ষীয়ান এই কথাসাহিত্যিক ২০২১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়া হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জসীমউদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ব্র্যাক ব্যাংক সমকাল সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছেন। 

রোববার (২৯ আগস্ট) সকাল ৯টায় রাজধানীর বাংলাবাজারের প্যারীদাস রোডের শিমতলা মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। ওইদিন বেলা ১১টায় শ্রদ্ধা নিবেদন ও দ্বিতীয় জানাজার জন্য তার কফিন বাংলা একাডেমিতে আনা হবে। দাফন কোথায় হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। 

এইচকে