দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) তিনি পদত্যাগ করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

মুস্তাফিজ শফি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত। তিনি একজন কবিও। এর আগে দৈনিক সমকালের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন তিনি। কাজ করেছেন প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, আজকের কাগজসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। 

এছাড়া ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, লায়ন্স ক্লাব ও ইউনেস্কো ক্লাব মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মুস্তাফিজ শফি। ‘একাত্তরের বিজয়িনী’ গ্রন্থের জন্য তিনি ‘রবি সম্মননা’ পেয়েছেন। 

১৯৭১ সালের ২০ জানুয়ারি সিলেটের বিয়ানীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন মুস্তাফিজ শফি। তার পৈতৃক বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের আস্টসাঙ্গন গ্রামে।

মুস্তাফিজ শফির বাবা প্রয়াত সফিক উদ্দিন আহমেদ ও মা প্রয়াত জয়গুন নেসার। বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি পঞ্চম। মুস্তাফিজ শফি ১৯৮৭ সালে জলঢুপ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৮৯ সালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৯১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ২০০০ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ছোটবেলা থেকে শফি কবিতা লিখতেন। সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও তার বিচরণ রয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ানো হয় তার পুরস্কারপ্রাপ্ত একাধিক প্রতিবেদন। তিনি সক্রিয় আছেন শিশুসাহিত্যেও। তার লেখা প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— কবিতার বই ‘পড় তোমার প্রেমিকার নামে, ‘মধ্যবিত্ত কবিতাগুচ্ছ’, ‘দহনের রাত’, সাংবাদিকতা বিষয়ক গ্রন্থ ‘বিলেতের বাঙাল (বিলেতের বাঙালি জীবন নিয়ে ভিন্নধারার অনুসন্ধান)’, ‘নির্বাচিত অনুসন্ধান (পুরস্কারপ্রাপ্ত ও আলোচিত প্রতিবেদন)’, জীবনী ও রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ ‘চে’, শিশুতোষ ছড়ার বই ‘ভূতের সঙ্গে পদ্য’, গল্পের বই ‘মাথাকাটা ভূতবাহিনী’, উপন্যাস ‘ভূতকল্যাণ সমিতি’, তার সম্পাদনায় তৃণমূল থেকে তুলে আনা নারী মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মকাহিনী ‘একাত্তরের বিজয়িনী’ প্রভৃতি।

১৯৮৮ সালে সাপ্তাহিক সিলেট সংবাদ ও লন্ডনের সাপ্তাহিক সুরমায় লেখালেখির মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন মুস্তাফিজ শফি। এরপর কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নিউজ অ্যান্ড ফিচার সার্ভিসের হয়ে দৈনিক লাল সবুজে দুই মাস চাকরি করেন। একই বছরের আগস্ট মাস থেকে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক আজকের কাগজে নিজস্ব প্রতিবেদক, ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক মানবজমিনে নিজস্ব প্রতিবেদক এবং ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক প্রথম আলোয় নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন। একই পত্রিকায় পরবর্তী সময়ে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও উপ-প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে ২০০৪ সালের মার্চ পর্যন্ত কাজ করেন।

২০০৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০০৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক আমার দেশে বিশেষ প্রতিনিধি, উপ-প্রধান প্রতিবেদক ও পরে যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দৈনিক সমকালে বার্তা সম্পাদক, ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দৈনিক কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ও একই পদমর্যাদায় পরিকল্পনা সম্পাদক, ২০১১ সালের আগস্ট থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত দৈনিক জাগরণে (প্রকাশিতব্য) নির্বাহী সম্পাদক এবং ২০১২ সালের মার্চে দৈনিক সমকালে নির্বাহী সম্পাদক পদে যোগ দেন। পরে তিনি সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন সমকালের সহযোগী সম্পাদক মশিউর রহমান টিপুও। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন সমকালের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

পিএসডি/জেডএস/জেএস