চমেক হাসপাতালের সেই পুরাতন লাশঘর বন্ধ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশের অস্থায়ী লাশঘরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লাশঘরে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া নারীদের মরদেহের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারের ঘটনায় সেটি বন্ধ করা হয়। এখন আধুনিক ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারের লাশঘরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাখা হবে।
বুধবার (২ মার্চ) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, জরুরি বিভাগের পাশে যে অস্থায়ী লাশঘর আছে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে আধুনিক ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারের লাশঘরে মরদেহ রাখা হবে। এখন চমেকের মর্গ আছে। যে মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের প্রয়োজন হবে, সেগুলো পুলিশের মাধ্যমে আমরা চমেকের মর্গে সরাসরি পাঠিয়ে দেব।
তিনি বলেন, পুরাতন লাশঘরটি অপরাধীদের আখড়া হয়ে গিয়েছিল। তাই এটির ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। এখন নতুন লাশঘরটি ব্যবহার করা হবে। আর বন্ধ করে দেওয়া লাশঘরে স্টোর রুম করা হবে বা আনসার সদস্যদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) চমেক হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া নারীদের মরদেহের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারের অভিযোগে হাসপাতাল এলাকা থেকে সেলিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেলিম অস্থায়ী ভিত্তিতে চমেক হাসপাতালের মর্গে পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন। তার বিরুদ্ধে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সিআইডি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে।
পরের দিন মঙ্গলবার পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার সেলিমকে আদালতে নিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, গ্রেপ্তার সেলিম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই নারীর সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারের কথা স্বীকার করেছে।
বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে নগরীর চান্দগাঁও ও চকবাজার এলাকা থেকে দুটি মরদেহ আসে। এর মধ্যে একটি ১২-১৩ বছরের এক মেয়ে ছিল। দুজনের সঙ্গে সেলিম বিকৃত যৌনাচার করে। ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য চিকিৎসকরা সিআইডিতে সোয়াব পাঠান। তখন প্রোফাইলিং করতে গিয়ে দুজনের শরীরেই এক ব্যক্তির শুক্রাণু পাওয়া যায়। পরে তদন্ত করে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিআইডির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১২ বছরের এক কিশোরীর মরদেহ আসে চমেক হাসপাতালের মর্গে। একইভাবে এপ্রিল মাসেও আরেক নারীর মরদেহ আসে মর্গে। ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে চিকিৎসকরা মৃতদেহ দুটিতেই এইচভিএস (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) পান। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডিতে পাঠানো হয়। সিআইডির ডিএনএ ল্যাবের বিশেষজ্ঞরা মত দেন দুটি মরদেহেই একই পুরুষের শুক্রাণু। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে সিআইডি।
তদন্ত নেমে সিআইডি জানতে পারে, সেলিম মর্গে দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতেন। কোনো অল্প বয়সী নারীর মরদেহ মর্গে নেওয়া হলে পরের দিন কিংবা কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে লাশগুলোর সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার করতেন সেলিম।
কেএম/ওএফ