নিজের বাবার দ্বারা নির্যাতনের শিকার আসমা (ছদ্মনাম) নামের এক তরুণীর দায়িত্ব নিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী। তরুণীটির দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি এতিমখানায় ‘সেলাই প্রশিক্ষক’ হিসেবেও চাকরি দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) আগারগাঁওয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিকভাবে তরুণীর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আসমার বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলায়। বাবার নাম তাজুল ইসলাম এবং মায়ের নাম পারভীন আক্তার। তার মা ছিল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। তারা দুই ভাই-বোন। আসমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন বাবা তার মাকে তালাক দেয়। এরপরই মা দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন স্বামীর সঙ্গে কুমিল্লায় চলে যায়। তারপর ছোট আসমার আশ্রয় হয় নানা বাড়িতে। সেখান থেকে তাকে ছোট ফুফু সালেহা বেগমের বাসায় পাঠানো হয়। কিন্তু আসমা তার মাকে খুঁজতে ২০২০ সালে কাউকে না জানিয়ে ফুফুর বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু মাকে না পেলে পরবর্তীতে আসমার বাবা তাকে নরসিংদীতে নিয়ে আসেন। এরপরই তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানায়, জন্মদাতা পিতা টানা দুই মাস নির্যাতন চালায় আসমার ওপর। এরপর নির্যাতনের বিষয়টি টের পেয়ে যায় আসমার সৎ মা। ফলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আশ্রয়হীন হয়ে পুনরায় গিয়ে উঠেন নানাবাড়ি। কিন্তু নানার মৃত্যুর পর আবারও আশ্রয়হীন হয়ে পাড়ি জমায় চট্টগ্রামে নানার বড় ভাইয়ের বাড়ি। তবে ভুল করে সিলেটগামী ট্রেনে উঠে পড়ে। পরে তার আহাজারিতে তাকে সহায়তায় অনেকেই এগিয়ে আসেন। পরে একজন সংবাদকর্মীর সহযোগিতায় পুলিশের মাধ্যমে তাকে প্রথমে নেয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আদালতের নির্দেশনায় তার আশ্রয় মিলে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকালেই ছয় মাসব্যাপী পোশাক শিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ নেয় আসমা।

এ প্রসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি গত ২৭ জানুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যাই। তখনই মেয়েটির জীবনে ঘটে যাওয়া মর্মস্পর্শী কাহিনী জানতে পারি। এরপর আমিই তাকে পুনর্বাসনের জন্য চাকরি চেয়ে আবেদন করতে বলি। আদালতের অনুমতিতে আসমার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পেরেছি। 

এসআর/আইএসএইচ