নারীর অর্জনকে বৈষম্যহীনভাবে মর্যাদা দেওয়ার দিন আজ
সবক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেওয়ার দিন আজ। আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এদিনে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণ করেন এবং ভবিষ্যতের পথ পরিক্রমা নির্ধারণ করেন।
নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯১৪ সাল থেকে বিভিন্ন দেশ দিবসটি পালন করে আসছে। প্রতিবারের মতো এবার বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করবে। এবছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘টেকসই আগামীর জন্য জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’।
বিজ্ঞাপন
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে দেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সহযাত্রী হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে গত ৫০ বছরের অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্বে রোল মডেল পরিচিতি এনে দিয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের পাশাপাশি নারীদের সচেতনতা এ অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারী আন্দোলনের ইতিহাসে আজ এক গৌরবময় দিন। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা আর মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নারী আদায় করেছিল তার অধিকার। আদায় করেছিল বিশ্ব সমীহ। নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সব অগ্রগতি এবং উন্নয়নে করেছে সমঅংশীদারিত্ব। আর তাই সারাবিশ্বে বদলে গেছে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। এখন নারীর কাজে মূল্যায়ন হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বীকৃতি।
নারীদের জন্য বর্তমান সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে জ্ঞানভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য নারী-পুরুষ সবাইকে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এসেছি। নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও উদ্যোক্তা তৈরিতে জয়িতা ফাউন্ডেশনের অনলাইন মার্কেট প্লেস ‘ই-জয়িতা’ চালু করা হয়েছে। নারী পাচার, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ নারীর প্রতি যেকোনো ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে করা হয়েছে কঠোর আইন ও নীতি। এছাড়াও রয়েছে- মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১০৯, পুলিশের ৯৯৯ ও ৩৩৩ হেল্পলাইনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সহায়তা ব্যবস্থা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্বে, সংসদে, নীতি নির্ধারণে, রাজনীতি থেকে প্রশাসনে, শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায়, বিদেশে শান্তি রক্ষায়, গবেষণা থেকে খেলাধুলা, জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পর্বতারোহণ প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি এদেশের নারী আজ স্বীয় প্রতিভায় সমুজ্জ্বল। জেন্ডার বাজেটিং, মাইক্রো ফাইন্যান্স, ই-কমার্সের মতো উদ্যোগগুলো নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে।
যেভাবে এল দিবসটি
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের একটি পোশাক কারখানায় নারী পোশাক শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি ও শ্রমের দাবিতে আন্দোলন করেন। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল পুরুষের সমান মজুরি এবং দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি। এই আন্দোলনে পুলিশ নির্যাতন চালায় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করে।
১৯০৮ সালের একই দিনে নিউইয়র্কে পোশাক শ্রমিক ইউনিয়নের নারীরা আরেকটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। ১৪ দিন ধরে এই প্রতিবাদ চলে এবং এতে প্রায় ২০ হাজার নারী শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত শ্রম এবং শিশুশ্রম বন্ধের দাবিতে তারা এ আন্দোলন করেন।
১৯১০ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মান সমাজতাত্ত্বিক ক্লারা জেটকিন নারীর ভোটাধিকার এবং একটি নারী দিবস ঘোষণার দাবি জানান।
১৯১৩ সালে রাশিয়ায় নারীরা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ রোববার নারী দিবস হিসেবে পালন করেন।
১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়।
যৌন হয়রানি বন্ধে নীতিমালা করেছে পুলিশ
নারী সদস্যদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধে নীতিমালা ও কর্মপন্থা ২০২১’ প্রণয়ন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশ সদর দপ্তরের গাইডলাইনের আলোকে ডিএমপির সব বিভাগে কর্মরত পুলিশ সদস্য, নন-পুলিশ, সিভিল স্টাফ অথবা প্রেষণে কিংবা চুক্তিভিত্তিক বা অন্য কোনোভাবে কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে অভিযোগ গ্রহণ, অনুসন্ধান সম্পাদন ও সুপারিশ প্রদানসহ যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধকল্প এই নীতিমালায় প্রণীত হয়।
নীতিমালায় যৌন হয়রানি ও নির্যাতন বিষয়ক অভিযোগ গ্রহণের জন্য কমিটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি অভিযোগ গ্রহণ, অনুসন্ধান পরিচালনা ও সুপারিশ করবে। কমিটিতে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) সভাপতি, উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার সদস্য সচিব, সদর দপ্তর ও প্রশাসনের উপ-পুলিশ কমিশনার সদস্য, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের বিভাগীয় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সদস্য এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও জেন্ডার বিষয়ক এনজিওর একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন।
এআর/জেডএস