ও ভাই, আমার ভাইরে আইনা দেন। ও ভাই, আমার পড়া‌লেখার খরচ কে চালা‌বে। আমাদের সব শেষ, ভাইরে.., আমার ভাই...।

কান্না, আহাজারি, বিলাপ, মাতম- যাই বলি না কেন, বাংলাদেশের জাহাজে রুশ হামলায় নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বিমানবন্দরের মেঝেতে গড়িয়ে গড়িয়ে তার সবই যেন প্রকাশ করছিলেন শোকের প্রচণ্ড কাতরতায়। ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের হারানোর যে শোক তা যে একাই বহন করছে প্রিন্স ও তার পরিবার। 

দুপুর ১টার কিছু আগে শাহজালাল বিমানবন্দ‌রের সিআইপি গেটে এসে পৌঁছান হাদিসুরের ভাই প্রিন্স। ক‌য়েক মি‌নিট অপেক্ষার পর ভাই‌, ভাই ব‌লে চিৎকার কর‌তে থা‌কেন তিনি। এক পর্যা‌য়ে কণ্ঠ ভে‌ঙে আসে ত‌ার। কাঁদতে কাঁদতে মে‌ঝে‌তে লু‌টি‌য়ে প‌ড়েন প্রিন্স। বেশ কিছুটা সময় ভাই, ভাই ব‌লে মে‌ঝে‌তে গড়াগ‌ড়ি কর‌তে থা‌কেন প্রিন্স। প‌রে তি‌নি উঠে দাঁড়ান। আবার ভাই, ভাই ব‌লে চিৎকার কর‌তে থা‌কেন। এসময় বিমানবন্দরে উপস্থিত সবার মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকের চোখ ভিজে যায় হাদিসুরের ভাইয়ের কান্নায়।

সেখা‌নে ঢাকা পো‌স্টের স‌ঙ্গে কথা হয় প্রিন্সের। তি‌নি ব‌লেন, ‘আমরা পত্রপ‌ত্রিকায় দে‌খে‌ছি আমার ভাই (মরদেহ) আসবে। আমার ভাই, কখন আসবে সেটা জান‌তে চাচ্ছি। কিন্তু তারা কিছুই বল‌ছে না।’

প্রিন্স যেখানে কান্নাকাটি করছিলেন তার একটু স‌াম‌নে গেটের বাইরে নিহত না‌বিক হাদিসু‌রের বাবা-মাও কান্নাকাটি করছিলেন। হা‌দিসু‌রের বাবা একবার মে‌ঝে‌তে প‌ড়ে যান। তিনিও আহাজারি করতে থাকেন ‘আমার ছে‌লে‌রে আইনা দাও, আইনা দাও’ ব‌লে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। বাংলাদেশ সময় ২ মার্চ রাতে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে হামলার শিকার হয় জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। এতে জাহাজটিতে থাকা ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিকের একজন হাদিসুর নিহত হন।

ওই হামলায় বেঁচে যাওয়া ২৮ নাবিককে আজ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দুপুরে তারা ঢাকা পৌঁছেছেন। নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের পরিবার ভেবেছিল এই ২৮ জনের সঙ্গে হাদিসুরের মরদেহও আসবে। সে জন্য তারা বিমানবন্দরে এসে অপেক্ষা করছিলেন।   

তবে এখন পর্যন্ত জানা গেছে, রকেট হামলায় নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃতদেহ ইউক্রেনের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে হিমাগারে রাখা হয়েছে এবং পরে সুবিধাজনক সময়ে সেটি দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

এনআই/এমএইচএন/এনএফ/জেএস