অনেক বড় বড় দেশের ক্রুরা সেখানে আটকে আছেন, তাদের এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। আমাদের বাংলাদেশ খুব ছোট। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কূটনীতিকরা অনেক পরিশ্রম ও চেষ্টা করে আমাদের দেশে ফিরিয়ে এনেছেন।

বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ‌‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিক দেশে ফেরার পর জাহাজটির গ্রুপ ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা সবাই আনন্দিত যে সুস্থভাবে দেশ ফিরতে পেরেছি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও অস্ট্রিয়ার দূতাবাসের কঠোর পরিশ্রমের কারণে আমরা দ্রুত আসতে পেরেছি। এত দ্রুত দেশে ফিরতে পারব এটা ছিল আমাদের জন্য অকল্পনীয়। 

একইসঙ্গে অত্যন্ত গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি আমাদের সহকর্মী ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের মৃত্যুতে। তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা তার মরদেহ হিমঘরে রেখে এসেছি। 

জি এম নূরে আলম বলেন, আমরা নিয়মিত ডিউটিতে ছিলাম। বিকেলে যখন আক্রমণ হয় তখন জাহাজের ব্রিজে আগুন লেগে গিয়েছিল। এরপর আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। 

দেশবাসী আমাদের জন্য অনেক দোয়া করেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নৌ পরিবহনমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে বিভিন্ন পরামর্শ ও সাহস দিয়েছেন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও ফোন করে আমাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেন। 

আমরা দেখেছি, প্রায় ৬০ কিলোমিটার হেঁটে রিফিউজিরা (ইউক্রেনের নাগরিকরা) সীমান্ত অতিক্রম করছেন। কিন্তু আমাদের এত পথ হাঁটতে হয়নি। 

যেদিন থেকে যুদ্ধ শুরু হয় সেদিন সকাল থেকেই অলভিয়া বন্দরের চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না বলে জানান গ্রুপ ক্যাপ্টেন আলম।

এর আগে বুধবার দুপুরে দেশে এসে পৌঁছান ক্যাপ্টেন আলমসহ ২৮ নাবিক। তাদের বহনকারী টার্কিশ এয়ারলাইন্সের টিকে-৭২২ ফ্লাইটটি দুপুর ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

জাহাজে হামলার ঘটনায় মারা যাওয়া থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মাদ হাদিসুর রহমানের মরদেহ ইউক্রেনের একটি বাংকারের ফ্রিজারে রাখা হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে মরদেহটি দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে গতকাল মঙ্গলবার জানান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) উপ-মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে আটকে পড়ে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ। ২ মার্চ রাত ৯টা ২৫ মিনিটে জাহাজটি হামলার শিকার হয়। হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান নিহত হন। জাহাজটিতে মোট ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন।

জীবিত ২৮ নাবিককে গত ৩ মার্চ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ইউক্রেনের একটি বাংকারে নেওয়া হয়। পরে তাদের নিরাপদে রোমানিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। সেখান থেকে কার্গো নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল এটির। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরপরই পণ্যবোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেয় শিপিং কর্পোরেশন। শেষ মুহূর্তে পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের এই জাহাজ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অলভিয়া বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এনআই/এমএইচএন/ওএফ