ইমারত আইন ও বিধিমালাগুলো আরও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন বলে মনে করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রাজউক কর্মকর্তাদের মতে, দুষ্কৃতকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ইমারত নির্মাণের জন্য যে আইন ও বিধিমালা রয়েছে তা শক্তিশালী নয়। তাই আইন ও বিধিমালাগুলো আরও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।

রোববার (২০ মার্চ) ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডুরা) সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় রাজউক কর্মকর্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।

সভায় ডুরা সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অনেক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চান না। কোনো তথ্য নিয়ে সহযোগিতা করেন না। তাছাড়া রাজউকের জনসংযোগ দপ্তরটিও শক্তিশালী নয়।

এমন অভিযোগের জবাবে সভায় রাজউক চেয়ারম্যান আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, রাজউকের সেবার মান কীভাবে আরও সহজ করা যায় সেজন্য আমরা কাজ করছি। আমি নিজে সব ফোনকল রিসিভ করি। আমি সবসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলি। গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য ও বক্তব্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য প্রত্যেক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনসংযোগ দপ্তরকেও শক্তিশালী করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিদিন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করি। কিন্তু রাজউকের এ ভালো কাজগুলোর প্রচারণ নেই। ডেঙ্গু নিয়ে এমন কোনো দিন নেই যে আমরা কাজ করিনি। অনেক অনেক লোক বিল্ডিং পরিষ্কার করেছে। মাসে প্রায় ১০০টি অবৈধ স্থাপনা ভাঙা হয়। গত মাসে ৮৭টি স্থাপনা, বাড়ি ভাঙা হয়েছে। আমরা সব তথ্য সেবা অনলাইনে দিচ্ছি। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরে পার্কের পরিমাণ এক শতাংশের কম। এটা খুবই লজ্জাজনক। সেটি বৃদ্ধি করার জন্য আমরা রিভাইস ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করেছি। ২০১৪ সাল থেকে আমি পুরান ঢাকা নিয়ে কিছু গবেষণা করছি। আমরা এরই মধ্যে গবেষণার চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে গেছি। আর এরই মধ্যে আমরা বৈদেশিক সাহায্য প্রকল্পের সহায়তায় আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আমরা অতি দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষর করব। সার্ভে করার জন্য আমরা বিশেষ বরাদ্দও পাচ্ছি। পুরান ঢাকার উন্নয়নের জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে সাতটি এলাকাকে আমরা নির্ধারণ করেছি। পুরান ঢাকার উন্নয়ন রাজউকের একটি স্বপ্ন। আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব।

সভায় রাজউক পরিচালক উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-১ মো. মোবারক হোসেন বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য রাজউক শুধু একা দায়ী নয়, অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোরও দায় রয়েছে। এফআর টাওয়ারে আগুন লেগেছে। কিন্তু এজন্য সবাই রাজউককে দায়ী করছে। অথচ আগুনের সূত্রপাত কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে হয়েছে। এর দায়িত্ব কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানের। সিটি কর্পোরেশন যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছে। অথচ তারা যেখানে এ লাইসেন্স দিচ্ছে সেই ভবন বা ফ্ল্যাটটি বৈধ কি না তা দেখছে না।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী রায়হান ফেরদৌস বলেন, হাতিরঝিল নিয়ে অনেকের শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা দূর হয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে প্রকল্প বুঝে নেওয়ার পর আমরা এটার ব্যবস্থাপনা করছি।

রাজউক আইনে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার একটা বিধান রয়েছে। কিন্তু সেটি কার্যকর করার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রাজউকের উত্তরা প্রকল্পে এটা করা হয়েছে। অন্যান্য নকশায়ও এটা যুক্ত করা হচ্ছে।

ডুরা সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— সংগঠনের সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম, হাসিব মাহমুদ শাহ, সাধারণ সম্পাদক শাহেদ শফিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী, অর্থ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা সাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক নিলয় মামুন, প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য মশিউর রহমান খান, রফিকুল ইসলাম রনি, মুসা আহমেদ, সদস্য তোফাজ্জল হোসেন কামাল, সাদ্দাম হোসেন, আবির হাকিম, ছাইফুল মাসুম, নাজমুল হাসান রাজ প্রমুখ।

এএসএস/এসএসএইচ