বছরের তিন মাস নিয়মিত খেতে পান না দেশের উত্তরবঙ্গের তিন জেলার ভূমিহীন মানুষরা। উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে মৌসুমি দারিদ্র বেশি। এই জেলার ভূমিহীনদের ২৫ শতাংশ নিয়মিত খেতে পান না। 

সোমবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে (বিআইডিএস) ‘সিজনাল প্রভার্টি, ক্রেডিট অ্যান্ড রেমিটেন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এসময় বিআইডিএস মহাপরিচালক (ডিজি) বিনায়ক সেন উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট জেলা থেকে ডেটা নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আগস্ট ২০১৫ থেকে জুলাই ২০১৬ মেয়াদে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানেও এসব অঞ্চলে একই অবস্থা চলমান। প্রতিবেদনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক।

প্রতিবেদন উপস্থাপনে অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মৌসুমি দারিদ্র প্রধান চ্যালেঞ্জ। মৌসুমি দারিদ্র নিরসনে ক্ষুদ্র ঋণ অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে। উত্তরবঙ্গের তিন জেলা বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে মৌসুমি দারিদ্র বেশি। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই ৩ মাস তাদের নিয়মিত কাজ থাকে না ফলে তারা মৌসুমি দারিদ্রের শিকার হন। অতিদারিদ্রর এই সময়ে অভিবাসন একটা সমাধান হতে পারে। কিন্তু তারা অভিবাসন হতে পারে না কারণ তাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা থাকে না। নেপালে মৌসুমি দারিদ্রদের ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা নিয়ে নেপালের মৌসুমি দারিদ্র জনগোষ্ঠী কাজের জন্য ভারতে গিয়ে বড় টাকা আয় করে। একইভাবে বাংলাদেশে এই পদ্ধতি চালু করা যায় মৌসুমি দারিদ্র নিরসনে। যদি মৌসুমি দারিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতে ৭ হাজার টাকা দেওয়া হয় তবে তারা এই টাকা থেকে ২৬ হাজার টাকা আয় করে ঘরে ফিরতে পারবেন।

তিনি বলেন, মৌসুমি দারিদ্র বাংলাদেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। উত্তরবঙ্গের ২৫ শতাংশ মানুষ ঠিক মতো খেতে পারছে না। যদি তিন বেলা খেতেও পায় তবুও খাবারের পরিমাণ কম। প্রোটিন পায় না, খাদ্য নিরাপত্তা থাকে না। তারা সবসময় খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে। এই অবস্থা বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে। নেপালে এবং ইন্দোনেশিয়াতেও পাওয়া যাচ্ছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তবে তিনটা জেলার মধ্যে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার অবস্থা খারাপ।

এক প্রশ্নের জবাবে মুশফিক মোবারক বলেন, আমি ২০২০ সালে প্যানডামিকের মধ্যেও ডেটা কালেক্ট করে দেখেছি। ২০০৭ সালে যে সমস্যা দেখা গেছে তা ২০১৬ ও ২০২০ সালেও দেখা গেছে। ভূমিহীন দরিদ্রের ২৫ শতাংশ নিয়মিত খেতে পায় না। ২৫ শতাংশ যারা নিয়মিত খেতে পারছে না তারাই মৌসুমি দারিদ্র। 

তবে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাস ভূমিহীনদের ২৫ শতাংশ নিয়মিত খেতে পায় না। এই তিন মাস নিয়মিত খেতে না পারার কারণ কি এমন প্রশ্নের জবাবে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, তিন জেলায় সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাস কোন কাজ থাকে না। ফসল ফলাতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়। কাজ না থাকলে মজুরিও কমে যায়। এখানে শ্রমিক অনেক কিন্তু কাজ বেশি নাই তাই এই সময় এখানে মজুরি কমে আসে।

মৌসুমি দারিদ্র নিরসনের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই সময় গুলোতে এই তিন জেলায় কাজ থাকে না। কিন্তু অন্যান্য এলাকায় কাজ পাওয়া যায়। এই জন্য মাইগ্রেশন করতে হবে। মাইগ্রেশন করতে গেলে মৌসুমি দারিদ্রের শিকারদের কিছু টাকা দিতে হবে। এমনভাবে লোনটা দিতে হবে যখন কাজ করে ফেরত আসবে তখন টাকা ফেরত দিতে হবে। তবে অন্যান্য ক্ষুদ্র ঋণের মতো এটা হবে না। এসব মানুষদের সময় দিতে হবে। কারণ এরা তো কোন ব্যবসা করছে না। এরা এই টাকা নিয়ে মাইগ্রেশন হবে কাজের জন্য। সুতরাং এদের সময় দিতে হবে।

এসআর/আইএসএইচ