৫-২৫ লাখে এমবিবিএস ডাক্তার বানান নুরুল হক সরকার!
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি নামে একটি ইউনিভার্সিটি খুলে এমবিবিএসসহ অন্তত ১৪৪টি কোর্সের সার্টিফিকেট দিতেন ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার।
১৯৯৬ সাল থেকে তিনি শত শত মানুষকে এমবিবিএস-বিডিএস সার্টিফিকেট দিয়েছেন। প্রতিটির জন্য হাতিয়েছেন ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এসব সার্টিফিকেটধারী ভুয়া চিকিৎসক ছড়িয়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষ অভিযান চালিয়ে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও একজন সহযোগীসহ ভুয়া চারজন এমবিবিএস চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিম। বুধবার রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন চক্রের মূলহোতা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির ভিসি ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার (৭২), মো. মোয়াজ্জেম হোমেন (৫৮), ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল (৩০), মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ (৩৭), ডা. মো. আমান উল্লাহ (৩৮) ও দেবাশীষ কুণ্ডু (৫২)।
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, অ্যাডমিট কার্ড, নকল সিল, চারটি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ভুয়া সনদের চটকদার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং, লিফলেট, প্রেসক্রিপশন, অসংখ্য ভিজিটিং কার্ড, একটি সিপিইউ, ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, দুই দশকের বেশি সময় ধরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির ব্যবসা করে আসছিলেন তারা।
প্রতারণার কাজে তারা ভুয়া ওয়েবসাইট, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতেন। তাদের কম্পিউটারাইজড ক্যাম্পাসের কোনো অস্তিত্ব নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া আদেশ ও হাইকোর্টের রিটের জাল কপি দেখাতেন তারা। চক্রটির রোগী দেখার চেম্বারও অত্যাধুনিক উপায়ে সজ্জিত। নামফলক সংবলিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিগ্রি বেশ আকর্ষণীয়ভাবে চেম্বারে প্রদর্শন করা হতো।
এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিং, এলএলবিসহ ১৪৪ কোর্সের অসংখ্য সার্টিফিকেট দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন চক্রের সদস্যরা। গ্রেপ্তার ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার নিজেকে পিচ ব্লেনডে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও পিস ল্যান্ড ইউনিভার্সিটি ইত্যাদির ভিসি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন।
নুরুল হক সরকার তার পরিবারের সদস্যদেরসহ অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় ভুয়া সনদপত্র দেওয়ার একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলেন। এ চক্র কোনো রকম পরীক্ষা-ক্লাসের বৈধ অনুমোদন না নিয়েই টাকার বিনিময়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করত। নিজের বাসায় ও ভাড়া করা অফিসে বসে তারা কোটি টাকার সার্টিফিকেট বিক্রি করেছে।
তিনি বলেন, ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, ডা. মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ ও ডা. মো. আমান উল্লাহ একটি মাদরাসা থেকে দাখিল ও কামিল পাস করে টাকার বিনিময়ে এমবিবিএস ডিগ্রির ভুয়া সার্টিফিকেট নেন। সুসজ্জিত চেম্বার খুলে তারা চিকিৎসক রোগীও দেখতেন নিয়মিত।
প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সার্টিফিকেট প্রত্যাশীরা মোবাইলের মাধ্যমে সার্টিফিকেটের জন্য যোগাযোগ করতেন। পার্সেলের মাধ্যমে ভুয়া সার্টিফিকেটগুলো তাদের কাছে পাঠানো হতো। এমবিবিএস সার্টিফিকেটের জন্য ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতেন ডা. মো. নুরুল হক সরকার।
এমবিবিএস ডিগ্রি দেওয়ার সঙ্গে তিনি একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বরও দিতেন, সেটিও ছিল ভুয়া। ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির মালিক হলেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। তার ইউনিভার্সিটিতে কতজন শিক্ষক রয়েছেন সেটিও তিনি ভুলে গেছেন বলে জানান। প্রতারক হিসেবে তিনি প্রসিদ্ধ।
ভুয়া ডিগ্রি/সার্টিফিকেট নিয়ে ভুয়া ডাক্তাররা কোনো চাকরি পেয়েছেন কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুজন আছেন চাকরিজীবী। সাভারে একজনের চেম্বার রয়েছে এবং ডায়াগনস্টিক চেম্বার রয়েছে।
ডিবি প্রধান অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা কোন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হচ্ছে, সে সম্পর্কে ইউজিসির ওয়েবসাইটে গেলেই অভিভাবকেরা খোঁজ নিতে পারবেন। সেই ইউনিভার্সিটি অনুমোদনপ্রাপ্ত কি না এবং তাদের নামে কোনো অভিযোগ রয়েছে কি না তাও জানা যাবে।
এমএসি/আরএইচ