সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় একটি বই জব্দ করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, একজন নারীর কাছ থেকে বইটি উপহার পেয়েছিলেন বাবুল আক্তার৷ বইটির কয়েকটি পৃষ্ঠায় হাতের লেখাও ছিল। সেই উপহারের বইয়ে থাকা হাতের লেখা ও বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। 

মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের কাছে প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে। সেই বইয়ে থাকা লেখা ও বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষা করে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। 

মিতু হত্যা মামলা তদন্ত করছে পিবিআই। পিবিআইয়ের চট্টমেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা শুক্রবার ( ২২ এপ্রিল) ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাহমুদা হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষার জন্য গত ১৪ মার্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) এ–সংক্রান্ত পরীক্ষার নির্দেশ দেন। সিআইডি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। 

তবে প্রতিবেদনে কী আছে তার বিস্তারিত বলেননি পিবিআই পুলিশ সুপার। বইয়ের লেখা ও বাবুল আক্তারের হাতের  লিখা মিলছে কি না এই বিষয়ে তিনি বলেন, এই বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। শুধু প্রতিবেদনটি পেয়েছি এইটুকু বলতে পারব। মামলাটির তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে। আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার সময়  প্রতিবেদনটির তথ্য ও কাগজপত্র জমা দেওয়া হবে। 

এই বিষয়ে জানার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুককে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি তিনি। 

এর আগে, আদালতে বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনে বলা হয়, মাহমুদা হত্যা মামলায় আলামত হিসেবে জব্দ করা জিনিসপত্রের মধ্যে একটি বই আছে। বইটি এক নারীর কাছ থেকে বাবুল আক্তার উপহার পেয়েছেন।

বইয়ের তৃতীয় পাতায় একজনের হাতে লেখা কিছু বিবরণ রয়েছে। এ ছাড়া বইটির শেষের দিকে আরেকজনের হাতে লেখা কিছু বিবরণ রয়েছে। দুটোই ইংরেজি ভাষায় লেখা। নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলাদা ব্যক্তি এ দুটো বিবরণ লিখেছেন।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, মামলার আলামত হিসেবে উদ্ধার করা বইটির তৃতীয় পাতায় একজনের হাতের লেখা।  আর শেষের পাতায় আরেকজনের হাতের লেখা। ধারণা করা হচ্ছে,  তৃতীয় পাতার লেখাটি বই উপহার দেওয়া নারীর। আর শেষের পাতার লেখাটা বাবুল আক্তারের।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মাহমুদা খানম হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। আদেশের পর বিচারকের খাস কামরায় বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করা হয় ২২ মার্চ। এর আগে বাবুলের হাতের লেখা পরীক্ষার জন্য পিবিআই ১৪ মার্চ আদালতে আবেদন করে। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেছিলেন, মাহমুদা হত্যা মামলায় আলামত হিসেবে জব্দ করা জিনিসপত্রের মধ্যে একটি বই আছে। বইটি এক নারীর কাছ থেকে বাবুল উপহার পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। বইয়ের তৃতীয় পাতায় একজনের হাতে লেখা কিছু বিবরণ পাওয়া গেছে। একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠার (২৭৬) পরের পাতায় আরেকজনের হাতে লেখা কিছু বিবরণ দেখা গেছে। বিবরণ দুটি ইংরেজিতে লেখা। তবে তা পৃথক ব্যক্তির লেখা। এতে পরিচয়, সাক্ষাৎসহ নানা বিষয় আছে।

গত বছরের মে মাসে মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার এজাহারে এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বাবুল তার স্ত্রী মাহমুদাকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। যদিও ২৫ জানুয়ারি মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই। পিবিআই জানায়, একই ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত এগিয়ে নিতে মিতুর বাবা মোশাররফের মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না। সম্প্রতি আদালত এটিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেন। তাই আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে ও বিধিবিধান অনুসারে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাবুলের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলবে।

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার ও মিতুর বাবা বাদী হয়ে পৃথক সময়ে দুটি মামলা করেন পাঁচলাইশ থানায়।  মামলাগুলো তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। এর মধ্যে বাবুল আক্তারের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। অধিকতর তদন্ত চলাকালে আদালতের আদেশে ৯ জানুয়ারি বাবুল আক্তারকে নিজের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। মিতুর বাবার করা মামলাটিও তদন্ত করছে পিবিআই। 

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম (মিতু)। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পরে ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। 

কেএম/এসকেডি