করোনা মহামারির কারণে গত বছর ঈদের সময় অনেকেই গ্রামে যেতে পারেননি। এবার যেহেতু করোনার প্রকোপ নেই, তাই বাসে বাড়তি চাপ পড়বে বলে ধারণা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।

জানা গেছে, সরকারি ক্যালেন্ডারে আগামী ২ থেকে ৪ মে তিনদিন ঈদের ছুটি নির্ধারিত আছে। তার আগে ১ মে শ্রমিক দিবস তথা মে দিবসের ছুটি। এর আগে ২৯ ও ৩০ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে এবার মূলত ঈদের ছুটি শুরু হবে ২৯ এপ্রিল। মাঝখানে ৫ মে বৃহস্পতিবার অফিস খোলা। এরপর ৬ ও ৭ মে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ৫ মে বন্ধ থাকলে ঈদে ৯ দিনের সরকারি ছুটি থাকত। এই দিন ছাড়াও এবার ৬ দিনের লম্বা ছুটিতে যাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এর ফলে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে সড়কপথে বিভিন্ন রুটে ২৯ ও ৩০ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিটের চাপ অনেক বেশি। এই দুই দিনের অগ্রিম টিকিট এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। যে সিটগুলো বাকি রয়েছে, সবগুলোই পেছনের সারির। তবে এই দুই দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোর অগ্রিম টিকিটে চাপ নেই।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর টিটিপাড়া, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ীর বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। এসব কাউন্টার থেকে মূলত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ইত্যাদি এলাকার বাস যায়।

সায়েদাবাদের হানিফ পরিবহনের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রানিং বাসে যাত্রীর আহামরি চাপ নেই। আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত কিছু যাত্রী ছিল। এরপর থেকে অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে বাস যাচ্ছে। বলা যায়, পুরো বাসই একরকম ফাঁকা থাকছে।

তিনি বলেন, এবার মূলত বেশি ছুটির কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২৯ এপ্রিল থেকে ছুটি শুরু হওয়ায় এদিন ও ৩০ এপ্রিল টিকিটের চাপটা একটু বেশি। এই দুই দিনের ৮০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলোও একদম পেছনের সারির। আগের মতো ২৮ ও ২৯ রমজানে বাড়তি চাপ এবার নেই।

সৌদিয়া পরিবহনের কর্মকর্তা সুমন বলেন, এবারে করোনা না থাকলেও আগের মতো চাপ নেই। ঈদের ছুটি বেশি থাকায় অনেকে ধীরে ধীরে যাচ্ছেন। সকাল থেকে এই পর্যন্ত যতগুলো বাস কাউন্টার ছেড়েছে, সবগুলোই ৬০ শতাংশের বেশি আসন ফাঁকা রেখে ছেড়েছে। 

তিনি বলেন, ২৮-৩০ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বেশিরভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। ১-২ মে’র টিকিট এখনও রয়ে গেছে। এগুলো কাল আর পরশুর মধ্যে বিক্রি হতে পারে। 

যাত্রাবাড়ীর ইউনিক কাউন্টারের কর্মকর্তা জামিল বলেন, অন্যান্য বছরগুলোতে ঈদের আগের দুই দিনের অগ্রিম টিকিটের জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ত। তবে, এবারের পরিস্থিতি অন্যরকম। ছুটি বেশি হওয়ায় ওই দুই দিনের টিকিটের ওপর চাপ কমেছে।

টিটি পাড়ার ড্রিম লাইনের কর্মকর্তা বাপ্পী বলেন, গত বছর করোনা থাকায় এবার বেশি মানুষ বাড়ি যাচ্ছে। তারপরও ধাপে ধাপে যাওয়ায় ভিড় কম মনে হচ্ছে। সকাল থেকে যাত্রী অনেক কম। তবে সন্ধ্যার পর বাড়তে পারে।

নোয়াখালী রুটের বাস একুশে এক্সপ্রেস। বাসটির কর্মকর্তা সুমন বলেন, আমরা অগ্রিম টিকিট বিক্রি করি না। রানিং গাড়িতে এখন পর্যন্ত খুব বেশি যাত্রী যায়নি। তবে ২৮ ও ২৯ রমজান ভরপুর যাত্রী হবে।

ড্রিম লাইন, একুশের মতো একই অবস্থা এনা পরিবহন, ইকোনো, ঢাকা এক্সপ্রেস, হিমালয় এক্সপ্রেস, লাল সবুজ, হিমাচল, ডিবি ড্রিম লাইন, কেকে ট্রাভেলসেরও। কোনো কাউন্টারে গিয়েই দুয়েকজনের বেশি যাত্রীর দেখা মিলল না। অনেক কাউন্টারে যাত্রীই নেই।

তবে, ব্যতিক্রম দেখা গেছে স্টার লাইন কাউন্টারে। ফেনী যেতে অগ্রিম টিকিটের পাশাপাশি রানিং টিকিটের জন্যও মানুষের ভিড় দেখা গেছে সেখানে।

এখান থেকে ৩০ এপ্রিলের অগ্রীম টিকিট কেটেছেন আবু বকর ছিদ্দীক। তিনি বলেন, ছুটি বেশি থাকায় আগে আগে টিকিট কেটে রাখলাম। এখন ঠিকমতো যেতে পারলেই হয়। 

স্টার লাইনের কর্মকর্তা মিজান জানান, ২ মে পর্যন্ত প্রায় সব বাসের অধিকাংশ অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। যেগুলো বাকি আছে, সেগুলোও আজ বা কালকের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।

এএজে/আইএসএইচ