পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, পদ্মা নদীতে আর কোনো সেতু নির্মাণ করা হবে না। কারণ সেতুতে নদীর ক্ষতি হয়। এজন্য সেতু না করে পদ্মা নদীতে টানেল করলে নদী ও সময় দুটোই বাঁচবে বলে জানিয়েছেন তিনি। দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়াতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী এ কথা বলেন। মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) সদস্যদের সম্মানে ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমার মতে টানেল ব্যয় সাশ্রয়ী। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু না করে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় টানেল নির্মাণ করা ভালো হবে। দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণের বদলে টানেল নির্মাণ করা ভালো হবে। সেতুর বদলে টানেল নির্মাণ করলে ব্যয় কম হবে ও সময় কম লাগবে। সেতুর বদলে এসব স্থানে টানেল নির্মাণ করা যায় কি না চিন্তা করা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর খুব ইচ্ছা এখানে কিছু হোক। তারপরও বলি আপনারা প্রধানমন্ত্রীর ওপর ভরসা রাখেন এখানে টানেল বা সেতু হবে। এখানকার মানুষের সমস্যা নিরসন হবে।

উন্নয়ন প্রসঙ্গে এম এ মান্নান বলেন, দেশের যারা মালিক জনগণ তাদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। দেশে এখন উন্নয়ন জরুরি। উন্নয়নের বার্তা সবার কাছে পৌঁছে গেছে। সবার কাছে পরিষ্কার উন্নয়নই মৌলিক, উন্নয়নই ভিত্তি। সংস্কৃতি, রাজনীতি যাই কিছু বলুন না কেন উন্নয়ন সবার চাই। সবার মধ্যে একটু পরিবর্তন এসেছে। কেউ হানাহানি চায় না, সবাই উন্নয়ন চায়। আগামীতে আরও উন্নয়ন হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মানুষের প্রয়োজন উন্নয়ন। তবে দিন শেষে আমাদের দরকার রুটি রুজির সংস্থান, বৈশ্বিক কল্যাণ। বৈশ্বিক কল্যাণের বাইরে আমার অন্য বিষয়ে এতটা ধারণা নেই। তবে এই কাজ সবাই করছি। এখন উন্নয়ন আগে রাজনীতি পরে।

মন্ত্রী বলেন, গ্রামের মানুষ এখন একনেক সম্বন্ধে জানে। তারা মঙ্গলবার সম্বন্ধে জানতে চায়। সাধারণত একনেক সভা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে  মঙ্গলবার কি কি প্রকল্প পাস হবে। কোন মন্ত্রীর কি হলো, কোন মন্ত্রী মরে গেল না বেঁচে গেল— এটা নিয়ে তাদের আগ্রহ নেই। মানুষের আগ্রহ এখন উন্নয়ন নিয়ে।

এম এ মান্নান আরও বলেন, গণমাধ্যম, আমলা, মন্ত্রী— সবাই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়নে আরও বেশি করে কাজ করতে হবে। পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়েছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে। ফলে যেকোনো দুর্যোগে সহজেই ভেঙে পড়বে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশ কোনোদিনও শ্রীলঙ্কা হবে না। কেননা আমরা এখনও ঋণ সীমার অনেক নিচে আছি। আমাদের মেগা প্রকল্পগুলো সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রকল্পই ফেল করবে না। শ্রীলঙ্কার হাম্মাম টোটা বন্দর তৈরি হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। ফলে তাদেরকে চীনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে হয়েছে। আমাদের জিডিপির আকার অনেক বড়। আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পরিকল্পিত উন্নয়ন ও অর্থনীতির পথে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাজেটের যে আকার ধরা হয় সেটিরই প্রতিবছর বাজেটে প্রতিফলন ঘটে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করে বিরোধী একটা পক্ষ ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। যা মোটেও ঠিক নয়।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক রয়েছি। অপ্রয়োজনীয় কোনো ব্যয় সরকার করে না। জনগণের জন্য দেশের প্রয়োজনে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং অগ্রগতি চলমান থাকবে। গণমাধ্যম দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যেকোনো ভুল-ত্রুটি যেমন ধরিয়ে দেওয়া গণমাধ্যমের দায়িত্ব, তেমনি ভালো কাজগুলোও তুলে ধরাটাও কর্তব্য।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, যে কোনো উন্নয়নই টেকসই হতে হবে। টেকসই নয়, সেটি কোনো উন্নয়নই নয়। তাই সরকার টেকসই উন্নয়ন করে যাচ্ছে। আমরা সবাই মিলেই কাজ করছি। এ দেশ এককভাবে আমলার, রাজনীতিবিদের বা সাংবাদিকদের নয়। সবার এই দেশ। তাই সবাই মিলেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে আমাদের সবাইকে উন্নয়নে সামিল হতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিজেএফবির সভাপতি হামিদ-উজ-জামান। সঞ্চালনা করেন ডিজেএফবি’র সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— ডিজেএফবি’র সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, যুগ্ম-সম্পাদক মফিজুল সাদিক, অর্থ সম্পাদক সাইদ রিপনসহ সংশ্লিষ্টরা।

এসআর/এসএসএইচ