ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত হচ্ছে চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যেতে পারেননি কেউ। কিন্তু এবারের ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকরা ছুটে আসবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। 

সোমবার (২ মে) বা মঙ্গলবার দেশে ঈদ হতে পারে। ঈদের নামাজের পর শিশুদের নিয়ে অনেকে ছুটবেন শিশু পার্ক কিংবা চিড়িয়াখানায়। তরুণ-তরুণীরা ভিড় জমাবেন ফয়’স লেক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, পারকি সমুদ্র সৈকত, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ও স্বাধীনতা পার্কসহ চট্টগ্রামের  বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে।

পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত করা হচ্ছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। শেষ মুহূর্তে ধোঁয়ামোছা, রং করে চকচকে করা, রাইডের যন্ত্রাংশগুলো পরীক্ষা করে নেওয়া ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজগুলো সেরে নিচ্ছেন বিনোদন কেন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর মানুষদের কাছে অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র চিড়িয়াখানা। ঈদে দর্শনার্থীদের জন্য বর্ণিল সাজে সেজেছে এটি। সাধারণত ছোট শিশুদের বিভিন্ন পশু-পাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই নিয়ে যাওয়া হয় চিড়িয়াখানায়। ছোটদের পাশাপাশি বড়দের জন্যও এটি অনেক প্রিয় বিনোদন কেন্দ্র।  

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত এ চিড়িয়াখানায় রয়েছে দেশি-বিদেশি পাখি নিয়ে তৈরি অ্যাভিয়ারি পার্ক, বাঘ, সিংহ, জেব্রা, উট পাখি ও ইমু পাখিসহ নানান প্রজাতির প্রজাতির প্রাণী। এ চিড়িয়াখানায় মাত্র ৫০ টাকার টিকিট কেটে ঘুরে বেড়ানো যাবে অনায়াসে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। ঈদের ছুটিতে যারা চিড়িয়াখানায় আসবেন তাদের নিরাপত্তার জন্য ও মায়লা আর্বজনা যাতে না হয় সেজন্য অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া ৪৭টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে পুরো চিড়িয়াখানা মনিটরিং করা হবে।

তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে গত দুই বছর কেউ চিড়িয়াখানায় আসতে পারেনি। এই দুই বছরে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ বেড়েছে ৬টি। হরিণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার পশু পাখি বেড়েছে চিড়িয়াখানায়। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ৬৬ প্রজাতির ৬২০টি পশু-পাখি দেখতে পারবেন দর্শনার্থীরা। 

তিনি বলেন, ঈদের বন্ধে প্রতিদিন ৬০ হাজার দর্শনার্থী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আসবে বলে আশা করছি। 

চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানার পাশেই আরেকটি বড় বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক। ফয়’স লেকের এমিউজমেন্ট পার্ক এবং সি ওয়ার্ল্ড করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল। দুই বছর পরে দর্শনার্থীদের বরণে প্রস্তুত করা হচ্ছে পার্কটি। বিভিন্ন রাইড ঠিক করা হচ্ছে। পাশাপাশি লেকে ভ্রমণের জন্য নতুন দুইটি নৌযানও যোগ করা হয়েছে।

পার্ক পরিচালনাকারী কোম্পানি কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গেল দুই বছর ঈদে করোনার কারণে পার্ক বন্ধ ছিল। এবছর ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার দর্শনার্থী আসবে বলে আশা করছি। সেই অনুযায়ী প্রিপারেশন নিচ্ছি। পার্কে আসা দর্শনার্থীদের কিভাবে ভালোভাবে সেবা দেওয়া যায় সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তিনি বলেন, দুই বছর বন্ধ থাকার কারণে সংস্কার করতে হয়েছে বেশি। এছাড়া বিভিন্ন রাইডে রং করাসহ লাইটিংয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।  

বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, লেকের বোটে দর্শনার্থীদের চাপ একটু বেশি থাকে। সেজন্য লেকে নতুন করে দুইটি বড় বোট সংযোজন করা হয়েছে। আর সি ওয়ার্ল্ডের থ্রিলিং রাইডগুলোও প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া আমাদের থাকার রিসোর্টগুলোও প্রস্তুত রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য।
 
তিনি বলেন, ফয়’স লেকের নিরাপত্তার জন্য আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এরপরও ট্যুরিস্ট পুলিশ, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে।

চট্টগ্রামের কাজরি দেউড়ী শিশুপার্কেও চলছে ঈদের প্রস্তুতি। পার্ক পরিচালনাকারী ওয়ান্ডার ল্যান্ডের জিএম মো. নাছির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পার্কে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইড রয়েছে। এগুলো ধুয়ে, মুছে পরিষ্কার করেছি। এককথায় বলতে পারেন আমরা প্রস্তুত।

তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে যে পরিমাণ দর্শনার্থীর আশা করেছিলাম তা হবে না বলে মনে হচ্ছে। কারণ প্রায় ৯ দিনের টানা ছুটি। অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। ফলে পার্কে মানুষজন কম হতে পারে। এছাড়া ঈদের সময় বৃষ্টির আংশকা রয়েছে। কিন্তু এরপরও আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়েছি, বাকিটা ঈদের দিন থেকে বুঝা যাবে।

নগরীর পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি ঈদের ছুটিতে লোকসমাগম হবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকত, সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে। আর এ সব বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকদের নিরাপত্তায় থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের পতেঙ্গা জোনের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইসরাফিল মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কিভাবে ভালো সেবা দেওয়া যায় সেই ব্যাপারে অতিরিক্ত আইজিপি (ট্যুরিস্ট পুলিশ) আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেভাবে প্রস্তুত। এছাড়া লোকাল স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, মতবিনিময় করেছি। 

তিনি বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশে যেহেতু জনবল সংকট আছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশও কাজ করবে। আশা করছি সবাই মিলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সেবা দিতে পারব। এ বছর ঈদের বন্ধে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রচুর জনসমাগম হবে বলে ধারণা করছি।

কেএম/আইএসএইচ