‘পাশাপাশি দাঁড়ানো যাবে না, হাত মেলানো যাবে না, কোলাকুলি করা যাবে না’। গত দুই বছর এ ধরনের ডজন খানেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই কেটেছে দেশবাসীর ঈদ। জামাত হয়নি খোলা জায়গায়, সমাগম করতে দেয়া হয়নি। অনেকটাই ভাটা পড়েছিল ঈদের আনন্দে। দেশবাসী মরিয়া হয়ে উঠেছিল একটা স্বাভাবিক ঈদ উদযাপনের জন্য।

অবশেষে কেটেছে অপেক্ষার প্রহর। স্বাভাবিক হচ্ছে পৃথিবী, অনেকটাই স্বাভাবিক বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি। আর তাই দুই বছর পর এবার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একে অন্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোলাকুলি করে এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে দেশবাসী।

রোববার দেশের কোথাও চাঁদ দেখা না যাওয়ায় ৩০টি রোজা পূর্ণ করে মঙ্গলবার মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করা হবে। ঈদের এই উৎসবে বাংলাদেশিরা ভুলে যায় সব ভেদাভেদ৷ সব শ্রেণির মানুষ এককাতারে ঈদের নামাজ পড়বে, আনন্দ করবে ৩০ দিন রোজা পালনের।

প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও ঢাকার অধিকাংশ মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে চলে গেছেন৷ কেউ কেউ চাঁদরাতেও কোন না কোন যানবাহনে চেপে গ্রামে যাচ্ছেন৷ ঈদকে কেন্দ্র করে কার্যত ফাঁকা রাজধানী ঢাকা।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদুল ফিতর মানেই খুশি ও আনন্দ, আসুন আমরা সবাই মিলে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ ও ভাগাভাগি করি।’

এবার ঈদের জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এতে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন।

তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঈদের দিন বৈরী আবহাওয়া থাকলে ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তার সার্বিক দিক পরিদর্শন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, জাতীয় ঈদগাহে চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে ডিএমপি।

তার নির্দেশনা অনুযায়ী, ঈদ জামাতে আসা মুসল্লিরা জায়নামাজ ও ছাতা সঙ্গে নিয়ে আসতে পারবেন। এর বাইরে কোনোকিছু সঙ্গে নিয়ে আসতে ‘না’ বলা হয়েছে। মুসল্লিদের আর্চওয়ে গেট দিয়ে ঈদগাহে প্রবেশ করতে হবে। কারো সঙ্গে ব্যাগ থাকলে সেটি তল্লাশি করা হবে। মুসল্লিদের নির্ধারিত সময়ের আগে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেছেন র‍্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেছেন, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‍্যাব প্রস্তুত আছে। ঈদুল ফিতরে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‍্যাব সারা দেশে নজরদারি বাড়িয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র‍্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহসহ বিভিন্নস্থানে র‍্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং করা হবে।

এবারের ঈদে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের মোট ৫টি জামাত যথাক্রমে সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা, ১০টা ও ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

ঈদের দিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদের নামাজ আদায় করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। নামাজের পর রাষ্ট্রপতি ক্রেডেনশিয়াল হলে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

এআর/আইএসএইচ