বাজারে কোনো জিনিসের দামই নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই। অল্প বেতনের চাকরি করে ঢাকায় সংসার চালানো যে কঠিন কাজ তা শুধু আমরাই বুঝি! গরুর মাংসের দাম এতো বেশি যে গত কয়েক মাস কিনতে পারিনি। বাধ্য হয়ে ঈদের আগের দিন ৭৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছিলাম। এবার বেড়েছে তেলের দাম। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য তেলও এখন আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। কিন্তু সেটা ছাড়া তো আর রান্না হবে না। তাই বাধ্য হয়েই অল্প কিনে কাজ চালাতে হবে।   

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফিরোজ আহমেদ। তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে শুক্রবার রাজধানীতে বসবাসরত নিম্ন ও মধ্য আয়ের বেশকিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট। তাদেরই একজন ফিরোজ আহমেদ। 

বাজারে সয়াবিন তেলের সংকটের মধ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, যা এতদিন ১৪০ টাকা ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৭৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮৫ টাকায়। নতুন এ দাম শনিবার থেকে কার্যকর হবে। এক মাসের ব্যবধানে এক লাফে ভোজ্যতেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা বাড়ল। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা।

আগে কিনতাম ১৪০ টাকা লিটার, দোকানদার আজ বলল কাল থেকে ১৮০ টাকায় তেল পাওয়া যাবে। সারা দিন যা রোজগার করি তার অধিকাংশই চলে যায় বাজার করতে। সব জিনিসের দাম বাড়তি, ভালো মতো কিছুই খাওয়াতে পারি না ছেলে-মেয়েদের। এর মধ্যে তেল এমন এক জিনিস যা প্রতিদিন লাগে এই তেলের দামও যদি লিটার প্রতি ৩৮-৪০ টাকা বাড়ে তাহলে আমরা যাবো কোথায়, খাবো কী?

ঢাকায় ৫ বছর ধরে রিকশা চালান জহুরুল ইসলাম, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকেন কড়াইল বস্তিতে। গুলশান লেক পাড়ে তিনি যাত্রী নামিয়ে স্থানীয় দোকানে খোলা সয়াবিন তেল খুঁজছিলেন। এ সময় কথা হয় ওই রিকশাচালকের সঙ্গে।

তিনি বলেন, খোলা তেল-বোতলের তেল কোথাও পাচ্ছি না। একে ঈদের পর তার মধ্যে শুক্রবার তাই রাস্তায় মানুষ নেই, ট্রিপও তেমন নেই। যে কারণে আধা বেলা গাড়ি (রিকশা) চালিয়ে এখনই ঘরে ফিরব। আমাদের কড়াইল বস্তিতে কোথায় তেল পাইনি কয়েকদিন। তাই যাত্রী নামিয়ে এখানে তেল খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না।

তেলের দাম যে বেড়েছে এ খবর জানেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জহুরুল ইসলাম বলেন, তেলের দাম বাড়ার খবর শুনেছি। আগে কিনতাম ১৪০ টাকা লিটার, দোকানদার আজ বলল কাল থেকে ১৮০ টাকায় তেল পাওয়া যাবে। সারা দিন যা রোজগার করি তার অধিকাংশই চলে যায় বাজার করতে। সব জিনিসের দাম বাড়তি, ভালো মতো কিছুই খাওয়াতে পারি না ছেলে-মেয়েদের। এর মধ্যে তেল এমন এক জিনিস যা প্রতিদিন লাগে এই তেলের দামও যদি লিটার প্রতি ৩৮-৪০ টাকা বাড়ে তাহলে আমরা যাবো কোথায়, খাবো কী?

খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, যা এতদিন ১৪০ টাকা ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৭৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮৫ টাকায়। নতুন এ দাম শনিবার থেকে কার্যকর হবে।

মিরপুর ১০ নম্বর পর্বতা সেনপাড়া এলাকায় জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন মোহন লাল। তিনি বলেন, তেল খাওয়া তো আর একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না, খাওয়াই লাগবে। কিন্তু তেলের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়া জন্য আগে যদি মাসে ৩ লিটার কিনতাম এখন কিনব ২ লিটার। তাও এতো দাম দিয়ে তেল কেনা আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য জুলুম ছাড়া আর কিছুই না।

মোহনা লালের মতো শহরের রিকশাচালক, হকার, তরমুজ বিক্রেতা, হকার, বাসচালক, হেলপার, দোকান কর্মচারী, গার্মেন্টসকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে তেলর দাম বৃদ্ধি বিষয়ে কথা হলে তারাও তাদের ক্ষোভের কথা জানান। 

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৪ মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলো। হঠাৎ করে প্রতি লিটারে ৩৮ টাকা কেন দাম বাড়ানো হলো জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম অনেক বেশি। প্রতি টন প্রায় ১৯০০ ডলার। তাই দেশে তেলের দাম সমন্বয় করেছে আমদানিকারক ও মিল মালিকরা। অনেকদিন যাবৎ মিল মালিকরা তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমরা রমজানে তেলের দাম বাড়াতে দিইনি। প্রতি মাসে সমন্বয় করার কথা থাকলেও ২০ মার্চের পরে করা হয়নি। তাই বেশি বেড়েছে। 

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৮০ টাকা। এক বছর আগে ২০২১ সালের ৫ মে বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১১৮ টাকা।

তেল খাওয়া তো আর একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না, খাওয়াই লাগবে। কিন্তু তেলের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়া জন্য আগে যদি মাসে ৩ লিটার কিনতাম এখন কিনব ২ লিটার। তাও এতো দাম দিয়ে তেল কেনা আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য জুলুম ছাড়া আর কিছুই না।

এ বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছিলেন, ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বেশির কথা বলে দাম সমন্বয় করেছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাবে তখন আমাদের দেশেও যেন দাম কমিয়ে সমন্বয় করা হয়। এতদিন তো তেল পাওয়াই যায়নি। এখন লিটারে ৩৮ টাকা বেড়ে যাওয়ায় যেসব ব্যবসায়ীরা তেল মজুদ করেছে তারা ভোক্তার আরও কিছু টাকা হাতিয়ে নিতে পারবে। 

এএসএস/এসকেডি