আকার, আকৃতি, পরিমাণ সবই আগের মতো, তবে এখন দাম হয়েছে দ্বিগুণ। প্রতি পিস পরোটা এখন বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। অথচ কিছুদিন আগেও প্রায় সব হোটেল-রেস্টুরেন্টে পরোটা বিক্রি হতো ৫ টাকায়। বলতে গেলে ৫ টাকায় আর পরোটা পাওয়া যায় না।

হোটেলে আসা কাস্টমাররা বলছেন, হঠাৎ করেই ঢাকা শহরে হোটেলগুলোতে পরোটা ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়েছে। রাজধানীর কোথাও আর ৫ টাকার পরোটা পাওয়া যায় না। কিছুদিনের ব্যবধানে পরোটার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেল।

রাজধানীর ফার্মগেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, আজিমপুর, পুরান ঢাকা, মতিঝিল, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মগবাজার, শান্তিনগরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রেস্টুরেন্টগুলোতে ৫ টাকা পিস পরোটা বিক্রি হতে দেখা যায়নি। পরোটা ঠিকই আগের মতো আছে, তবে দাম হয়েছে ১০ টাকা। 

সেইসঙ্গে শিঙাড়া, সমুচাসহ অন্যান্য জিনিসের আকৃতি ছোট করে আগের দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকরা বলছেন, ময়দা, তেল, গ্যাসসহ সব ধরনের উপকরণ বা কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির জন্য বাধ্য হয়ে পরোটার দাম বাড়ানো হয়েছে।

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় একটি হোটেলে নাস্তা খেয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাহাতাব আলী। পরোটার দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও পরোটার প্রতি পিস ৫ টাকায় খেতাম, কিন্তু এখন এর দাম একবারে দ্বিগুণ। এমন কোনো স্থানীয় দোকান নেই যেখানে পরোটা ১০ টাকা পিস করা হয়নি। সব সাধারণ হোটেল রেস্টুরেন্টেই এর দাম ১০ টাকা।

তিনি বলেন, আগে হোটেলে এসে নাস্তা করার সময় সাধারণত তিনটি পরোটা খেতাম, দাম দ্বিগুণ হওয়ার পর থেকে দুইটা করে পরোটা দিয়ে নাস্তা করি। আমাদের জীবন চলার পথে এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। সব ক্ষেত্রেই আমরা সাধারণ জনগণ কোণঠাসা।

কেন ৫ টাকার পরোটা হঠাৎ করেই ১০ টাকা হলো-  এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদপুর এলাকার মা হোটেলের মালিক নাজিম উদ্দিন বলেন, হোটেল পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে। আগে ময়দা কিনতাম ৪৪ টাকা কেজি এখন সেটা প্রায় ৬০ কেজি। আর পাইকারি দরে আগে যে ময়দার বস্তা ১ হাজার ৮০০ টাকা ছিল সেটা কিছুদিন আগে বেড়ে ২ হাজার ২০০ টাকা হয়েছিল। আর এখন একই ৫০ কেজির ময়দার বস্তা ২ হাজার ৮০০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। তেল ২২০ টাকা কেজি কিনতে হয়। গ্যাসের ১২ কেজি সিলিন্ডার এখনও ১ হাজার ৫০০ টাকা করে কিনছি। তাহলে তো এক পিস পরোটার দাম আরও বাড়ানো উচিত। নইলে আমাদের লস। হোটেলই চালতে পারব না। দাম বাড়ার কারণে কাস্টমারও অনেক কমে গেছে, আগের তুলনায় বিক্রিও কম হচ্ছে।

মহাখালীর ওয়্যারলেস এলাকায় হোটেলে সকালের নাস্তা খাওয়ার পর কথা হয় স্থানীয় এক বাসিন্দা মিজানুর রহমানের সঙ্গে তিনি বলেন, পরোটার যে দাম দ্বিগুণ হয়েছে শুধু তাই নয়, আগে শিঙাড়া-সমুচার যে সাইজ ছিল, সেই তুলনায় এখন আকার অনেক ছোট হয়ে গেছে। পরোটার দামও দ্বিগুণ হয়েছে। হোটেল মালিকদের এ বিষয়ে অভিযোগ জানালে তারা বলেন, কী করব ভাই বলেন, সব জিনিসের কেনা দাম বেশি, তাই বাধ্য হয়ে পরোটা ১০ টাকা পিস বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার দেলোয়ার হোসেন নামে এক হোটেল মালিক বলেন, বাজার চড়া হওয়ার কারণে আমাদের খাবার আইটেমের দাম বাড়াতে হয়েছে। সে অনুযায়ীই ৫ টাকার পরোটা ১০ টাকা করেছে সব হোটেলই। আসলে দাম বাড়ানোর জন্য আমাদের ব্যবসা খুব ভালো হচ্ছে- তা নয়, বরং ব্যবসা আগের চেয়ে খারাপ। পরোটা থেকে শুরু করে সব কিছুই আগের চেয়ে কম বিক্রি হয়। আগে যদি পরোটা ১০০ পিস বিক্রি করতাম এখন দাম বাড়ানোর পর তা ৬৫ থেকে ৭০ পিস বিক্রি হয়। আমরাও সমস্যার মধ্য আছি।

এ বিষয়ে হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু পরোটা নয়, সবকিছুরই দাম বেড়েছে। কেননা কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এতে করে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন দোকান মালিকরা। দাম বাড়লে বিক্রি কমে যায়। আগে যে কাস্টমাররা হোটেলে এসে অনেক কিছু খেতেন, এখন তারা খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে আমাদের বিক্রিও কমেছে।  

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে আছে। সব কিছুর দামই বাড়তি। এমনকি হোটেলে খেতে যেয়েও একজন মানুষকে ৫ টাকার পরোটা ১০ টাকায় কিনে খেতে হচ্ছে। তেল, ময়দা এসবের দাম বৃদ্ধির কারণে ভার এসে পড়েছে সাধারণ মানুষের কাঁধে। এর একটা প্রমাণ হলো রাজধানীতে ৫ টাকার পরোটা এখন হারিয়ে গেছে, দাম বাড়িয়ে সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১০ টাকায়।

এএসএস/আরএইচ