সুদির্নিষ্ট একটি কোম্পানিকে কাজ দিতে ব্র্যান্ডের নাম লিখে টেন্ডার আহ্বান করেছে ‘বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। এতে প্রকিউরমেন্ট আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়ে দুই লটে ১০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম কিনতে টেন্ডার আহ্বান করেছে প্রতিষ্ঠানাট। 

তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, এভাবে কঠিন শর্ত জুড়ে না দিয়ে চার থেকে পাঁচটা লটে টেন্ডার আহ্বান করতে পারত প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। তাহলে কাজের মান ভালোর পাশাপাশি দেশীয় কোম্পানিগুলো অংশগ্রহণ করতে পারত। এজন্য ব্যানবেইসের আহ্বানকৃত দরপত্রটি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এ বলা আছে, দরপত্রে প্রতিযোগিতা সীমিত করতে পারে, এমন কোনো শর্ত আরোপ করা যাবে না৷ একই আইনের বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের ট্রেডমার্ক বা পণ্যের ব্যবসায়িক নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যাবে না। 

এর আগে, সরকার গত বছর জুনে একটি পরিপত্রের মাধ্যমে জানিয়েছে, দরপত্র দাতাদের কাছে সহজবোধ্য করতে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যের বিবরণ উল্লেখ করা যাবে। তবে সেখানে ‘একইরূপ বা সমতুল্য’ শব্দ যোগ করতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই বিশেষ ব্র্যান্ড বা উৎসের প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শনের জন্য উল্লেখ করা যাবে না। পরিপত্রে এটাও উল্লেখ ছিল যে দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে কোনো কোনো ক্রয়কারী পণ্যের ব্র্যান্ড নাম, মডেল, নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের নাম উল্লেখ করছে, যা বিধান পরিপন্থী।

সূত্র জানায়, ব্যানবেইস ৩১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস)’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের অধীনে তারা দুই ধাপে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনবে। এর মধ্যে রয়েছে হার্ডওয়্যার, সার্ভার কক্ষের জন্য সরঞ্জাম, রাউটার, ফায়ারওয়্যাল, কানেকটিভিটি সুইচ, র‍্যাক, ইউপিএস, এভিআর, ডিজেল জেনারেটরসহ ৬৩ ধরণের আইটেম।

ব্যানবেইসের দরপত্রে দেওয়া টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনে দেখা গেছে, ২৩ নম্বর পাতায় আইসোলেশন ফায়ারওয়েল কেনার কথা বলা হয়েছে। এর ২০ নম্বর সিরিয়ালে লাইসেন্সিং কেনার কথা বলা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে স্পস্ট আমেরিকান ব্র্যান্ড সিসকোর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন একটা লাইনে বলা হয়েছে, সিসকো ফায়ার পাওয়ার ১০০০ স্ট্যান্ডার্ড এসএ লিসেনসর ইকিউভ্যালেন্ট অর বেটার। ২৭টি আইটেমে ৩৩ বার সিসকোর কথা উল্লেখ আছে। যে ফার্ম কাজ করবে তার ১০ বছরে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের এই অভিজ্ঞতা নেই। বড় টেন্ডার দুই প্যাকেজে সরঞ্জামাদি কেনার কথা বলা হয়েছে। এটা দুই লটে না কিনে একাধিক লটে কেনার দাবি করেছে অনেকে। দরপত্রে এমন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে তাতে অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। সবাইকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত সহজ করার দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

আরও জানা যায়, সরকারের ই-প্রকিউরমেন্ট ওয়েবসাইটে প্রথম ধাপে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার জন্য গত ৬ ও ৭ এপ্রিল দুটি দরপত্র আহ্বান করে ব্যানবেইস। টেন্ডারে অংশ নেওয়ার শেষ সময় ১২ মে ও ১৬ মে। ব্যানবেইস তাদের দরপত্র ও পণ্যের বিবরণে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নেটওয়ার্কিং পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিসকোর নাম বারবার উল্লেখ করেছে। যেটা প্রকিউরমেন্ট বিধি পরিপন্থী।

সিপিটিইউ এর নাম প্রকাশে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, বর্তমানে বেশিরভাগ দরপত্রই ডিজিটালি অর্থাৎ ই-জিপি টেন্ডারে মাধ্যমে হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) ই-জিপি টেন্ডার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজটি করে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের কোম্পানিকে কাজ দিতে নানা ধরণের শর্ত জুড়ে দিচ্ছে ই-টেন্ডারে। তবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করলে প্রকিউরমেন্ট বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, পিপিআর এর নিয়ম অনুযায়ী কোন ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করা যায় না দরপত্রে। কেউ যদি একটি কোম্পানির নাম লিখে থাকে তবে এটা নিয়ম অনুযায়ী করতে পারে না। নাম উল্লেখ করলে এটা একজনের জন্য করা হচ্ছে। এতে পিপিপি এর স্বচ্ছতা ব্যাহত হয় ও ম্যানুপুলেশেনের সুযোগ থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির উপ-প্রকল্প পরিচালক ড. মো. নাসির উদ্দিন গনি বলেন, পিপিআর-২৯ নম্বর আইনে লেখা আছে কারিগরি বিষয় বোঝানোর জন্য সিমিলারিটি বা বেটার বোঝাতে এটা লেখা যেতে পারে। তবে আমরা যে ওই কোম্পানির পণ্য নেব ব্যাপারটা এমন নয়।

এ বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক মো. শামছুল আলমকে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে ব্যানবেইসের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার নজরে নেই পিডি’র (প্রকল্প পরিচালক) সঙ্গে কথা বলেন। উনি এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

এসআর/আইএসএইচ