সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা আলাউদ্দিন হোসেন প্রতারণার উদ্দেশ্যে গ্রিন বার্ড মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটি খোলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েক ধাপে নিম্নআয়ের মানুষের কাছ থেকে টাকা নিতে শুরু করেন অধিক মুনাফা দেওয়ার কথা বলে। ১০-১৫ জনের কাছ থেকে টাকা নিতে নিতে এক সময় গ্রিন বার্ডের গ্রাহক সংখ্যা ১০০-২০০ জন ছাড়িয়ে যায়।

পরে আলাউদ্দিন প্রথম ধাপে টাকা দেওয়া কয়েকজন গ্রাহককে ভালো মুনাফাও দেন। এতে করে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রিন বার্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা আকাশচুম্বী হয়ে দাঁড়ায়। এরপর একে একে হাজার হাজার মানুষ অধিক মুনাফার আশায় গ্রিন বার্ডে টাকা জমা দিতে থাকে। এভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় আলাউদ্দিন।

গ্রাহকদের টাকা দিয়ে ঢাকায় গড়ে তুলেছেন দুটি বহুতল ভবন। এছাড়া ঢাকায় দুটি জমি রয়েছে তার। সব মিলিয়ে নিম্নআয়ের মানুষদের টাকায় ১৪-১৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ঢাকায় গড়েছেন আলাউদ্দিন। চলাফেরা করতেন রাজকীয়ভাবে।

সর্বশেষ ১০ মে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ভুক্তভোগীদের বিক্ষোভের মুখে আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে রামপুরা থানা পুলিশ। থানায় তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ সংশ্লিষ্ট দুটি মামলা রয়েছে।

এর মধ্যে ১৫ মে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার তিন দিনের রিমান্ড শেষ হলে ১৬ মে তাকে আদালতে হাজির করে দ্বিতীয় মামলায় আরও দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় মামলার রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদ বুধবার (১৮ মে) শেষ হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আলাউদ্দিন গ্রাহকদের ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। আত্মসাৎ করা এই অর্থ দিয়ে সে ঢাকায় ১৪-১৫ কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছে বলেও পুলিশকে জানায়। গ্রিন বার্ড নামে প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণার উদ্দেশ্যে সে খুলেছিল বলেও পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।

মঙ্গলবার (১৭ মে) রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আলাউদ্দিন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বিভিন্ন স্তরের নিম্নআয়ের মানুষের কাছ থেকে টাকা নিত সে। প্রথমে সে ১০-১৫ জনের কাছ থেকে, তারপর এইভাবে ক্রমান্বয়ে সে বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিতে থাকে। এভাবে টাকা নিতে নিতে যখন গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে যায় তখন সে প্রথম যারা টাকা দিয়েছিল তাদেরকে কিছুটা মুনাফা দেয়। কিছুটা লাভ দেওয়ার পর মানুষের বিশ্বস্ততা তার ওপরে বেড়ে যায়। তখন ব্যাপকভাবে মানুষ মুনাফা আয়ের আশায় তার কাছে টাকা জমা দিতে থাকে।

শুরু থেকে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্য ছিল আলাউদ্দিনের

রামপুরা থানার ওসি বলেন, প্রথমে কয়েক ধাপে ভুক্তভোগীদের টাকাই তাদের মুনাফার নামে ফিরিয়ে দিত আলাউদ্দিন। কিন্তু শুরু থেকেই তার উদ্দেশ্য ছিল খারাপ। সে শুরু থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিল বেশি টাকা হলে আত্মসাৎ করবে। এজন্য গ্রাহকদের টাকা সে কোথাও বিনিয়োগ করেনি। সে যদি বিনিয়োগ করতো গ্রাহকদের টাকা তাহলে আজ এই অবস্থা হতো না।

কত গ্রাহক জানে না আলাউদ্দিন

রামপুরা থানা সূত্রে জানা যায়, দায়িত্বহীনভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে আলাউদ্দিন। তার কাছে কোনো তালিকা নেই কত জন গ্রাহকের কাছে সে টাকা নিয়েছে।

এ বিষয়ে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম সে কতজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। কিন্তু সে কোনো সঠিক সংখ্যা আমাদের কাছে বলতে পারেনি। আলাউদ্দিন বলেছে যখন যেভাবে পেরেছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে। এছাড়া শুরু থেকেই যেহেতু অর্থ আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা ছিল তাই সে এসব তালিকা রাখার প্রয়োজন মনে করেনি।

গোড়ান ও খিলগাঁওয়ে আলাউদ্দিনের বহুতল বাড়ি

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রাহকদের ৩০ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে আলাউদ্দিন। এই টাকার মধ্যে ১৪-১৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ঢাকায় সে গড়েছে বলে পুলিশকে জানায়।

এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকার ওপরে আত্মসাৎ করেছে। তবে আরো কিছু টাকা মাঠকর্মীরা উঠিয়ে ছিলেন সেই টাকা অভিযুক্তর কাছে জমা হয়নি বলে জানিয়েছে। আত্মসাৎ করা টাকার মধ্যে ১৪-১৫ কোটি টাকা দিয়ে রাজধানীর গোড়ানে তিনতলা, খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় বাড়ি করেছে সে। এছাড়া আরো দুটি জায়গা সে কিনেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তবে তার বাকি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। বাকি টাকা দিয়ে কোথায় কি করেছে বা কোথায় রেখেছে তা জানার চেষ্টা করছি আমরা।

তিনি বলেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে এই ব্যবসা করার জন্য আলাউদ্দিন একটি লাইসেন্স নিয়েছিল। কিন্তু সেই লাইসেন্সের একটিও শর্ত পূরণ না করে সেই প্রতারণার ব্যবসা করে যাচ্ছিল। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তদারকি ছিল না। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে আমরা সন্দেহ করছি। তবে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানা যাবে।

এর আগে আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর গত ১১ ও ১২ মে পাওনা টাকার দাবিতে দুই দফা রামপুরা থানার সামনে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীরা। প্রায় ৫০০-৭০০ গ্রাহক এই বিক্ষোভ করে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে।

এমএসি/জেডএস